দীর্ঘ ১৫ বছরেও  কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের নেই একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ ওয়েবসাইট। ওয়েবসাইটের কোথাও কোনো রকম বিস্তারিত তথ্য দেওয়া নেই। একাডেমিক নিয়মিত তথ্য, এমনকি কুবির অধিকতর উন্নয়নের জন্য ১ হাজার ৬৫৫ কোটি ৫০ লাখ টাকার মেগা প্রকল্পের মাস্টার প্ল্যানের নকশা এবং সে-সম্পর্কিত পর্যাপ্ত তথ্যেরও ঘাটতি রয়েছে। ফলে শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয়-সংশ্লিষ্টরা পড়ছেন নানা বিড়ম্বনায়। তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আশ্বাস দিচ্ছে, শিগগিরই চালু করা হবে নতুন আধুনিক ওয়েবসাইট।

ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের শিক্ষার্থী কাতিব হাসান মুরাদ বলেন, আমরা যখন ওয়েবসাইটে প্রবেশ করি, শুধু কয়েকটা ফ্যাকাল্টি আর ফ্যাকাল্টি মেম্বারদের তথ্য পাই। গুরুত্বপূর্ণ নোটিশ বা তথ্য যথাসময়ে পাচ্ছি না। একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট আরও সহজলভ্য ও তথ্যবহুল হওয়া দরকার।

ওয়েবসাইট ঘেঁটে শিক্ষার্থীদের এসব অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। ওয়েবসাইটটিতে বিজ্ঞান অনুষদ ও ব্যবসা শিক্ষা অনুষদের কিছু বিভাগে কোন বিষয়গুলো পড়ানো হবে, দেওয়া থাকলেও বেশির ভাগ বিভাগে শুধু লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কেই লেখা রয়েছে। অনেক বিভাগে স্নাতকোত্তরের কোর্স চলমান থাকলেও নেই সে বিষয়ে কোনো তথ্য। বিভাগের নোটিশ বোর্ডগুলোয় নিয়মিত শিক্ষার্থীদের নোটিশ না থাকলেও উইকেন্ড/ইভনিং এমএ/এমবিএর নোটিশ রয়েছে।

বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভর্তি-সংক্রান্ত কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে প্রশাসনকে অবহিত করা হলেও নীরব ভূমিকা পালন করেছে। গত ১৫ বছরে মাত্র চারজন বিদেশি শিক্ষার্থী পেয়েছে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়। হালনাগাদ করা হয়নি স্টুডেন্ট কাউন্সিলদের তথ্য, যে কারণে বাধার মুখোমুখি হচ্ছে বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভর্তিপ্রক্রিয়া।

আমরা নতুন ওয়েবসাইটের জন্য রশিদুল ইসলাম শেখ স্যারকে (লোকপ্রশাসন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক) প্রধান করে একটা কমিটি গঠন করেছি। এই কমিটি সফটওয়্যার ফার্মগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে একটি ডায়ানামিক ওয়েবসাইট শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হবে।

অধ্যাপক ড. মো. আবু তাহের, রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত দায়িত্ব)

সিলেবাসের দিকে নজর দিলে দেখা যায়, শুধু গণিত ও লোকপ্রশাসন বিভাগে পূর্ণাঙ্গ সিলেবাস দেওয়া রয়েছে। বাকি যাদের দেওয়া রয়েছে, তাদেরগুলো আগের ব্যাচের জন্য কার্যকরী হলেও বর্তমান যেসব ব্যাচ চলমান, সেসব ব্যাচের জন্য নেই কোনো সিলেবাস।

এ ছাড়া আইসিটি ডিপার্টমেন্ট সিলেবাসের জায়গায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট থেকে তথ্য নিয়ে বিবরণপত্র (প্রসপেকক্টাস ইন কুমিল্লা ইউনিভার্সিটি) দেওয়া রয়েছে। প্রতিটা বিভাগের পোর্টফোলিও তৈরি করা থাকলেও বিজ্ঞান অনুষদের গণিত বিভাগ, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের লোকপ্রশাসন বিভাগ, ব্যবসা শিক্ষা অনুষদের ব্যবস্থাপনা বিভাগ ও প্রকৌশল অনুষদের দুই বিভাগ ছাড়া আর কোনো বিভাগের পোর্টফোলিওতে বিভাগের ছবিও দেওয়া নেই। সারা বছর বিভিন্ন দিবস, অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হলেও আপডেট করা হয়নি বিশ্ববিদ্যালয়ের পোর্টফোলিও।

ওয়েবসাইটটিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তাদের পরিচয় বিস্তারিত দেওয়া হয়নি। শুধু নাম, ছবি, ই-মেইল, ফোন নম্বর পর্যন্ত পরিচয় সীমাবদ্ধ। একজন শিক্ষক কোন বিষয়ে গবেষণা করছেন বা করেছেন, সেসব বিষয় নিয়ে কিছুই লেখা নেই ওয়েবসাইটে। ফলে শিক্ষার্থীরা কোন গবেষণার কাজে কোন শিক্ষকের কাছ থেকে সঠিক দিকনির্দেশনা পেতে পারেন, তা নিয়ে সংশয়ে থাকেন।

ওয়েবসাইটে তথ্যের অপর্যাপ্ততা ও সীমাবদ্ধতা নিয়ে আইটি সেলের সহকারী ডেটাবেইস প্রোগ্রামার মো. মাসুদুল হাসান বলেন, আমরা যুগোপযোগী একটা ওয়েবসাইট বানানোর প্রক্রিয়া শুরু করেছি। অলরেডি কয়েকটা সফটওয়্যার ফার্মকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। তাদের সঙ্গে বাজেট নিয়ে আলোচনা চলছে। অতি অল্প সময়ের মধ্যে আমরা নতুন ওয়েবসাইটটি সবার কাছে পৌঁছে দিতে পারব বলে আশা করছি।

এ বিষয়ে রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক ড. মো. আবু তাহের বলেন, আমরা নতুন ওয়েবসাইটের জন্য রশিদুল ইসলাম শেখ স্যারকে (লোকপ্রশাসন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক) প্রধান করে একটা কমিটি গঠন করেছি। এই কমিটি সফটওয়্যার ফার্মগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে একটি ডায়ানামিক ওয়েবসাইট শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হবে।

জাভেদ রায়হান/এনএ