বাগেরহাট শহরের ভৈরব নদের তীরের মাঝিডাঙ্গা এলাকা গত পাঁচদিন ধরে জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হচ্ছে। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। প্রতি বছরই আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে জোয়ারের পানিতে ভোগান্তিতে পড়তে হয় তাদের। জোয়ারের পানি ঢুকে ভাসিয়ে নেয় ঘরবাড়ি। ওই এলাকায় অবস্থিত খানজাহান আলী আশ্রয়ণ প্রকল্প এলাকায় ঘরের মধ্যে পানি ঢুকে যাওয়ায় রান্নাও বন্ধ রয়েছে অনেক পরিবারের। সমস্যা সমাধানে টেকসই বাঁধ নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

১৭ বছর ধরে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরে বাস করা দোকানি মুসা শেখ বলেন, প্রতি বছরই জোয়ারের পানিতে আমাদের ডুবতে হয়। বিশেষ করে আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে হাঁটু সমান পানি উঠে যায় সব জায়গায়। স্থানীয়রা মিলে যে বাঁধ দিই, তা পানির চাপ বাড়লেই ভেঙে যায়। অনেকেই এসে দেখে, ছবি তুলে নিয়ে যায়। কিন্তু কোনো কাজ হয় না।

স্থানীয় বাসিন্দা শহিদুল কাজী বলেন, নদের পাড় জুড়ে মাত্র ৫০০ মিটার বাঁধের অভাবে আশ্রয়ণ প্রকল্প ও স্থানীয়দের প্রতিবছর জোয়ারে ডুবতে হয়। পানির স্রোতে ঘরবাড়ি ভেঙে যাওয়ার পাশাপাশি, সুপেয় পানিরও সংকট দেখা দেয় আমাদের এখানে।

সুফিয়া বেগম নামে এক নারী বলেন, চার-পাঁচ দিন ধরে দুই বেলা জোয়ারের পানি ঘরে ঢুকছে। চুলার মধ্যে পানি থাকায় রান্না-বান্নাও বন্ধ আমাদের। কোনো রকম শুকনা খাবার খেয়ে থাকতে হচ্ছে।

জাহাঙ্গীর শেখ নামে অপর এক ব্যক্তি বলেন, আমরা ত্রাণ বা খাদ্য সহায়তা চাই না। আমাদের বাঁচার জন্য টেকসই বেড়িবাঁধ চাই। জনপ্রতিনিধি ও সরকারের কাছে আমাদের অনুরোধ, অতি দ্রুত যেন একটি বাঁধ নির্মাণ করে দেওয়া হয়।

স্থানীয় এক ভ্যানচালক জানান, পানি উঠে গেলে আমাদের কাজ-কর্ম বন্ধ হয়ে যায়। বাধ্য হয়ে বাড়িতেই বসে থাকতে হয়। জানি না কবে এই ভোগান্তির শেষ হবে।

এ বিষয়ে বাগেরহাট সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ মুছাব্বেরুল ইসলাম বলেন, আমরা প্লাবিত এলাকা সরেজমিনে পরিদর্শন করেছি। জোয়ারের পানি বাড়লে রাস্তা টপকে পানি লোকালয়ে প্রবেশ করে। ইতোমধ্যে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের সঙ্গে রাস্তার বিষয়ে এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের সঙ্গে বেড়িবাঁধের বিষয়ে আমাদের কথা হয়েছে। আশা করি দ্রুতই স্থানীয়দের দুর্ভোগ লাঘব হবে। 

বাগেরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাসুম বিল্লাহ জানান, পূর্ণিমার প্রভাবে স্বাভাবিকের চেয়ে জোয়ারের সময় সকল নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। যার ফলে মাঝিডাঙ্গা আশ্রয়ণ প্রকল্প ও পার্শ্ববর্তী এলাকা জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়েছে। মূলত বেড়িবাঁধ না থাকার কারণে জোয়ারের পানি সহজে লোকালয়ে প্রবেশ করছে। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা চিহ্নিত করে জোয়ারের পানি আটকানোর জন্য প্রকল্প প্রস্তাবনা দেওয়া হবে। প্রকল্প অনুমোদন হলে দ্রুত কাজ শুরু করব।

এদিকে পূর্ণিমার জোয়ারের কারণে অস্বাভাবিক পানি বৃদ্ধিতে বাগেরহাটের রামপাল, মোরেলগঞ্জ ও মোংলা উপজেলার অর্ধশতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে গত কয়েক দিনে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন প্লাবিত হওয়া গ্রামগুলোর বাসিন্দারা। পানি বৃদ্ধির কারণে সহস্রাধিক মাছের ঘেরও তলিয়ে যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। 

তানজীম আহমেদ/আরএআর