শিশু সাজিদের স্বজনদের আহাজারি

টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে বেসরকারি দেওয়ান হাসপাতালে ভুল চিকিৎসায় সাজিদ (১০) নামে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় হাসপাতাল সংশ্লিষ্টরা গা ঢাকা দিয়েছেন। শনিবার (১৩ মার্চ) সকালে এ ঘটনা ঘটে। 

শিশু সাজিদ টাঙ্গাইলের দেলদুয়ার উপজেলার লাউহাটী ইউনিয়নের সর্শিনারা গ্রামের জুয়েল হোসেনের ছেলে।

জানা গেছে, গত ৩ মার্চ সাইকেল চালাতে গিয়ে সাজিদের বাম হাতের ওপরের অংশের হাড় ভেঙে যায়। এরপর তাকে মির্জাপুরের দেওয়ান হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। শুক্রবার (১২ মার্চ) তার হাতের অস্ত্রোপচার করেন সার্জারি চিকিৎসক সোলাইমান হোসেন।

শিশুটির মা সুমা বেগম ঢাকা পোস্টকে বলেন, ছেলের হাত ভেঙে যাওয়ায় শুক্রবার রাতে দেওয়ান হাসপাতালে অপারেশন করানো হয়। রাতে ভালোই ছিল সাজিদ। শনিবার সকালে ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী ছেলেকে ইনজেকশন দেন হাসপাতালের এক নার্স। ইনজেকশন পুশ করার কিছুক্ষণের মধ্যেই ছেলেটি আস্তে আস্তে নিস্তেজ হয়ে মারা যায়।

দেওয়ান হাসপাতালের অর্থোপেডিক সার্জন ডা. সোলাইমান হোসেন মেহেদী ঢাকা পোস্টকে বলেন, শিশুটির হাতে সফলভাবে অস্ত্রোপচার করা হয়েছিল। শুক্রবার রাতে কথাও বলেছি শিশুটির সঙ্গে। শনিবার সকালেও শিশু এবং তার মায়ের সঙ্গে কথা বলেছি। এ সময় শিশু সাজিদ ভালো আছে বলে জানায়। এরপরই হাসপাতালের শিফা নামে এক নার্স শিশুটিকে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন এন্টিবায়োটিক সেফট্রিয়াক্সোন ও ব্যথানাশক ইনজেকশন পুশ করেন। 

ডা. সোলাইমান হোসেন মেহেদী বলেন, ওই ইনজেকশন ধীরে ধীরে শরীরে পুশ করার কথা, কিন্তু নার্স দ্রুত শিশুটির শরীরে ইনজেকশন পুশ করেন। এতে কিছুক্ষণ পরেই শিশুটি মৃত্যুর কোলে ঢোলে পড়ে। পরবর্তীতে ওই নার্স বিকল্প চিকিৎসা ব্যবস্থা না দিতে পাড়ায় শিশুটি মারা যায়। 

তিনি আরও বলেন, ওই নার্স কয়েকদিন হলো হাসপাতালে যোগদান করেছেন। এর আগে তিনি একটি প্রাইভেট প্রতিষ্ঠান থেকে পড়াশুনা করে দেওয়ান হাসপাতালে যোগদান করেন। 

মির্জাপুর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ রিজাউল হক দিপু ঢাকা পোস্টকে বলেন, এ নিয়ে শিশুটির পরিবার কোনো লিখিত অভিযোগ দেয়নি। তবে তারা মৌখিকভাবে জানিয়েছে ভুল চিকিৎসায় শিশুটির মৃত্যু হয়েছে। খবর পেয়ে পুলিশ পাঠানো হয়েছিল, কিন্তু শিশুটির পরিবার মরদেহ ময়নাতদন্ত করতে রাজি হয়নি। পুলিশের সুরতহাল রিপোর্টেও স্বাক্ষর করেনি।

এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মাকসুদা খানমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

টাঙ্গাইলের সিভিল সার্জন ডা. আবুল ফজল মো. সাহাবুদ্দিন খানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিষয়টি নিয়ে আগামীকাল কথা বলবেন জানান। শনিবার জেলায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব আসায় তিনি তার সফরসঙ্গী হিসেবে অফিসের বাইরে রয়েছেন বলেও জানান।

অভ‌িজিৎ ঘোষ/আরএআর