লঞ্চ মালিক সমিতির সহসভাপতি সাইদুর রহমান রিন্টুর মালিকানাধীন সুন্দরবন নেভিগেশন কোম্পানির সিরিজ লঞ্চ এমভি সুন্দরবন-১৬ আসছে আসন্ন ঈদুল আযহার পরে। অভ্যন্তরীণ রুটে সবচেয়ে বেশি ও বিলাসবহুল লঞ্চ হবে এটি। ইতোমধ্যে বিভিন্ন মাধ্যমে এ নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। 

লঞ্চের জগতে লিফট ও ডুপ্লেক্স কেবিন সংযোজন করে ২০১৬ সালে সুন্দরবন-১০ বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছিল যাত্রীদের রুচিতে। এরপর সুন্দরবন-৭ পুনর্নির্মাণ করে সুন্দরবন-১১ নামকরণে নদীতে নামানো হয়। সেটিও বেশ খ্যাতি অর্জন করে। তারপর চারটি ক্রমিক যুক্ত হলেও সেই অর্থে বিলাসবহুল ছিল না। তবে সুন্দরবন-১৬ অত্যন্ত ব্যয়বহুল ও আধুনিক প্রযুক্তি সম্পন্ন লঞ্চ। বলা চলে এটি হবে কোম্পানির ফ্লাগশিপ। এই লঞ্চটি পুরাতন কোনো লঞ্চের বডি ব্যবহার করে তৈরি করা হয়নি। সম্পূর্ণ নতুনভাবে মূল অবকাঠামো নির্মাণের পর শিপইয়ার্ড থেকে নামিয়ে কীর্তনখোলায় ভাসানো হয়েছে। এখন চলছে সৌন্দর্যবর্ধন আর বিদ্যুৎ সংযোগের কাজ।
 
সাইদুর রহমান রিন্টু ঢাকা পোস্টকে বলেন, কাঠামোগত কাজের আরও অগ্রগতি হলে ‘সম্মুখ সারির টেলিভিশন ও পত্রিকায়’ সাক্ষাৎকার দিবেন তিনি। তখন সুন্দরবন-১৬ নিয়ে বিস্তারিত বলবেন।

বরিশাল নগরীর বেলতলা খেয়াঘাট লাগোয়া সুন্দরবন শিপইয়ার্ডের ডকে কর্মব্যস্ত শতাধিক শ্রমিক। কারো হাতে বিদ্যুৎ সংযোগের ক্যাবল, কারো হাতে হাতুড়ি-পেরেক। আবার অনেকে কেবিনে বেড বসানোর পরিমাপ করছেন। কাঠমিস্ত্রিরা দেয়ালে নকশাবন্দি কাঠ বসানোর কাজে ব্যস্ত। কেউ করছেন ঝালাইয়ের কাজ। এক কথায় লঞ্চটির সব তলায় ব্যস্ততার কমতি নেই। শুক্রবার ও শনিবার শিপইয়ার্ড ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে।

শ্রমিকরা জানিয়েছেন, শুক্রবার সবাই কাজ করলেও শনিবার লঞ্চের এক ঠিকাদার মারা যাওয়ায় অনেক শ্রমিক কাজে যোগ দেননি। তাই তুলনামূলক কাজের চাপ কম। চারতলা বিশিষ্ট এই লঞ্চের তৃতীয় তলায় কথা হয় একজন কাঠমিস্ত্রির সঙ্গে। তিনি জানান, অত্যন্ত যত্নসহকারে বিভিন্ন আলপনার নকশা ফুটিয়ে তোলা হচ্ছে দেয়ালে দেয়ালে। বিদ্যুতের লাইন আর রং করা হয়ে গেলে এই বছরের শেষের দিকে যাত্রী পরিবহনের জন্য উপযুক্ত হবে লঞ্চটি।

সুন্দরবন নেভিগেশন কোম্পানির আরেক তরুণ কর্মচারী বলেন, সরকারিভাবে এখনো সার্ভে হয়েছে বলে জানা নেই। লঞ্চ নির্মাণ সম্পূর্ণ হলে একবার নৌ-অধিদফতর থেকে সার্ভে করে কত সংখ্যক যাত্রী পরিবহন করতে পারবে তার অনুমতি দিবে। সরকারি হিসেবের বাইরে স্বাভাবিকভাবেই ১০ হাজারের বেশি যাত্রী নিয়ে চলাচল করতে পারবে সুন্দরবন-১৬।


 
সুন্দরবন শিপইয়ার্ডের ব্যবস্থাপক মো. সোহাগ বলেন, সুন্দরবন-১৬ নিয়ে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। চেষ্টা করা হচ্ছে কোরবানির ঈদের পর যেকোনো সময় লঞ্চটি নৌরুটে যুক্ত করা যাবে। আগের লঞ্চের চেয়ে আরও স্মার্টভাবে তৈরি করা হচ্ছে লঞ্চটি। এতে লিফট ও ডুপ্লেক্সের মতো সুযোগ-সুবিধা থাকছেই, পাশাপাশি তিন তলায় সুন্দর একটি রিসিপশন কক্ষ নির্মাণ করা হচ্ছে।

এই কোম্পানির অন্যান্য লঞ্চের ক্যাপসুল ডিজাইন থেকে বাহ্যিক কাঠামোতে পরিবর্তন আনা হয়েছে। ডেক ও কেবিনের সামনে চলাচলের প্রশস্ত জায়গা, পর্যাপ্ত টয়লেট, ক্যান্টিনের ব্যবস্থা রয়েছে। খাবারের মান উন্নত করা হবে, পাশাপাশি যাত্রী সেবায় প্রশিক্ষিত কর্মী থাকবে। নিচতলা থেকে চারতলায় ৫ হাজারের অধিক এলইডি ও সাধারণ লাইটের সংযোজনে চমৎকার আলোকসজ্জায় আলোকিত করার পরিকল্পনা রয়েছে।

সোহাগ বলেন, দৈর্ঘ্যে ৩০০ ফুট এবং প্রস্থে ৫৪ ফুট লঞ্চটিতে সরকারিভাবে হয়তো ১২০০ থেকে ১৫০০ যাত্রীর ধারণক্ষমতার অনুমতি পেতে পারে। সুন্দরবন-১৬ লঞ্চে দুই শতাধিক শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কেবিন ভিআইপি, সেমি ভিআইপি, ইকোনমি, ফ্যামিলি, সিঙ্গেল ও ডাবল শ্রেণিতে বিন্যস্ত করা হয়েছে। পাশাপাশি সোফার ব্যবস্থাও থাকবে। সুরক্ষিত ডেকে যাত্রীরা নিরাপদে যেতে পারবেন।

দায়িত্বপ্রাপ্ত এই কর্মচারী বলেন, লঞ্চে যাত্রীদের চলাচলের সুবিধার জন্য উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন লিফট, ইঞ্জিন, মাস্টার ব্রিজের কাজ চলছে। এ ছাড়া থাকবে রাতে চলাচলের জন্য উন্নত প্রযুক্তির রাডার ও জিপিএস। নদীর ডুবোচর ও পানির পরিমাণ নির্ধারণ করে বসানো হচ্ছে ইকো সাউন্ডার। সরকারি সনদপ্রাপ্ত মাস্টার, সুকানি নিয়োগ করা হবে। যাত্রীদের কাঙ্ক্ষিত সেবা প্রদানে সর্বাত্মক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তিনি সবাইকে সুন্দরবন লঞ্চে ভ্রমণ করার আহ্বান জানান। 

এসপি