যশোরের শার্শায় সন্তানের দুধের জন্য রাস্তায় রাস্তায় সাহায্য চেয়ে অসহায় হয়ে ঘুরে বেড়ানো সেই বাবা শাহআলমকে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন সবাই। বুধবার (৭ জুলাই) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শাহআলমের একটি কান্নার ভিডিও প্রকাশ হয়।

ওই ভিডিওতে তিনি তার শিশুসন্তানের জন্য দুধ কিনতে সাহায্য চেয়ে পাচ্ছেন না বলে উল্লেখ করেন। কিন্তু ওই ভিডিওতে তিনি কিছু কথা বানিয়ে বলেছেন বলে স্বীকার করেন।

এদিকে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা বলছেন, শাহআলম সাহায্য চেয়ে না পাওয়ার কথা প্রকাশ করেছেন, সেটি সম্পূর্ণ সঠিক না। তাকে চাওয়ামাত্র সহায়তা করা হয়েছে। এছাড়া তিনি অসহায় বলে সরকারি ৪ সুবিধার আওতায় তার পরিবারকে রাখা হয়েছে।

স্থানীয় ইউপি সদস্য নজরুল ইসলাম বলেন, শাহআলম তার কাছে গতকাল বুধবার সকালে কষ্টের কথা বলতেই তাকে ব্যক্তিগতভাবে দুধ কেনার টাকা দিয়ে আবারও প্রয়োজন হলে দেখা করতে বলা হয়েছে। অথচ তিনি বাইরে প্রকাশ করেছেন, কেউ তাকে সহযোগিতা করেনি। এটা দুঃখজনক।

শাহআলমের ভাগনে স্কুলশিক্ষক লিটন জানান, শাহআলম নিজে সিএনজিচালিত অটো চালায় এবং মাঝে মধ্যে অন্য কাজও করে। আমরা জানতাম সে মোটামুটি ভালো আছে। তবে তার ঘরে যে শিশু দুধের জন্য কষ্ট পাচ্ছে, তা আমাদের একবারও জানায়নি।  জানালে সাধ্যমতো চেষ্টা করা হতো।

শার্শার নিজামপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবুল কালাম আযাদ বলেন, যখন সামাজিক মাধ্যমে জানতে পারলাম শাহআলম কষ্টে আছেন তখন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও তিনি ব্যক্তিগতভাবে তাকে সাহায্য করেছেন। তবে তিনি সহযোগিতা না চেয়ে আগে থেকে মানুষের কাছে যে অপপ্রচার করেছে, এটা দুঃখজনক।

এ সময় চেয়ারম্যান আরও জানান, শাহআলমকে অনেক আগেই সরকারি ৪ টি সুবিধার আওতায় আনা হয়েছে। এর মধ্যে তাকেকে গৃহ নির্মাণ করে দিয়েছে। তিনি একজন ভিজিডি সুবিধাভোগী। তার ছেলেকে স্কুল থেকে প্রতিবন্ধী কার্ড করে অর্থ সহয়তার ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়।

তিনি আরও বলেন, তার মাকেও বিধবাভাতার কার্ড প্রদান করা হয়েছে। শাহআলমের স্ত্রীর মাতৃত্বকালীন অর্থ সহয়তায় কার্ডের জন্য গত মাসে ইউনিয়ন পরিষদে কাগজপত্র জমা নেওয়া হয়েছে।

শাহআলম জানান, তার নিজের একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা আছে। যা চালিয়ে তার সংসার চলে। চলমান লকডাউনে সিএনজি চলাচল বন্ধ। এর মধ্যে তার স্ত্রীর সন্তান জন্মগ্রহণে সিজারে বেশ টাকা খরচ হওয়ায় তিনি অর্থ কষ্টে পড়েন। এতে সন্তানের দুধ কিনতে বুধবার সকালে পরিচিত একজনের কাছে ২ হাজার টাকা ধার চাইলে এক দিন পর দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন।

পরে স্থানীয় ইউপি সদস্য নজরুল ইসলামের কাছে কষ্টের কথা বললে তিনি তাকে এক কৌটা দুধের দাম দিয়ে প্রয়োজন হলে আবারও যোগাযোগ করতে বলেন। স্থানীয় চেয়ারম্যানের কাছে কষ্টের কথা কোনোদিন জানায়নি। তিনি মনের কষ্টে কিছু কথা বানিয়ে বলেছেন। তবে এগুলো কেউ এভাবে ছড়াবে বুঝতে পারেননি। এখন তাকে বিভিন্নভাবে অনেকে সহয়তা করেছে।

শার্শা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মীর আলিফ রেজা জানান, যখন আমরা বিষয়টি জানতে পেরেছি শিশুখাদ্যসহ বিভিন্নভাবে তাকে সহয়তা করা হয়েছে। পরবর্তীতে কোনো প্রয়োজন হলে তাকে যোগাযোগ করতেও বলা হয়েছে।

আতাউর রহমান/এমএসআর