মেলায় নিজের উদ্ভাবনী প্রকল্প দেখাচ্ছে এক শিক্ষার্থী

পরিবেশের বিশেষজ্ঞ ‘ডক্টর অফ ইনভাইরমেন্ট' সমাজ বা নির্দিষ্ট এলাকার বাস্তুসংস্থান রক্ষার্থে দুই হাতে কাজ করবে। এক হাতে উপস্থিত যেকোনো ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থের উপস্থিতি শনাক্ত করে তা নিষ্ক্রিয় করবে তরল পদার্থ ছিটিয়ে। আরেক হাতে যেকোনো পদার্থের বাধা সৃষ্টি হলে তা সরিয়ে ফেলবে নিমেষে।

এমনই একটি প্রকল্প উপস্থাপন করেছেন বগুড়ার সরকারি আজিজুল হক কলেজের শিক্ষার্থীরা। আবার পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় দূষণমুক্ত ইটভাটা নির্মাণকৌশল উপস্থাপন করেছে শিবগঞ্জের শিহালী উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। একইভাবে বগুড়া জিলা স্কুলে ২৭টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও ৫টি বিজ্ঞান ক্লাবের অংশগ্রহণে শুরু হয়েছে বিজ্ঞান মেলা ও বিজ্ঞান অলিম্পিয়াড।

সারা বিশ্ব সব কিছু দিনদিন বিজ্ঞাননির্ভর হয়ে উঠছে। সমাজের সব ক্ষেত্রে বিজ্ঞানের অবদান পরিলক্ষিত হয়। বিজ্ঞানের সাহায্য নিয়ে মহাশূন্যে নভোচারীরা মঙ্গলগ্রহে আবাস স্থাপনের কথা ভাবছে। বর্তমান শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার স্কুল থেকে সব পর্যায়ে বিজ্ঞানের ওপর গুরুত্ব দিয়েছে। সব স্থানে বিজ্ঞানের প্রয়োগ দেখা যায়।

মঙ্গলবার (১২ জানুয়ারি) দুপুর ১২টায় ৪২তম জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সপ্তাহ উপলক্ষে ‘কোভিড-১৯ এবং স্বাস্থ্য সুরক্ষা’ স্লোগানে এর উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক জিয়াউল হক। জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘর, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় বগুড়া জেলা প্রশাসন তিন দিনব্যাপী এই বিজ্ঞান মেলা ও বিজ্ঞান অলিম্পিয়াড আয়োজন করেছে। বিকেলে বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করা হয়।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মাসুম আলী বেগের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন সরকারি আজিজুল কলেজের রসায়ন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. মতিউর রহমান, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা তামহিনা খাতুন, জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) হযরত আলী, বগুড়া জিলা স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক শ্যামপদ মুস্তফী।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক জিয়াউল হক বলেন, সারা বিশ্ব সব কিছু দিনদিন বিজ্ঞাননির্ভর হয়ে উঠছে। সমাজের সব ক্ষেত্রে বিজ্ঞানের অবদান পরিলক্ষিত হয়। বিজ্ঞানের সাহায্য নিয়ে মহাশূন্যে নভোচারীরা মঙ্গলগ্রহে আবাস স্থাপনের কথা ভাবছে। বর্তমান শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার স্কুল থেকে সব পর্যায়ে বিজ্ঞানের ওপর গুরুত্ব দিয়েছে। সব স্থানে বিজ্ঞানের প্রয়োগ দেখা যায়। বর্তমানে দৃশ্যমান পদ্মা সেতু এই বিজ্ঞানের গবেষণার সফল প্রয়োগ। বিজ্ঞানীদের সঠিক গবেষণা একটি দেশ ও জাতিকে বিশ্বের উন্নত কাতারে নিয়ে যাবে। করোনা পরিস্থিতিতে বিজ্ঞানীদের গবেষণায় করোনার প্রতিষেধক আবিষ্কার হয়েছে। এখন শুধু সময়ের ব্যাপার আমাদের দেশে আসার। তাই তোমরা আজ যারা এই বিজ্ঞান মেলায় অংশ নিয়েছ, তারা ভবিষ্যতে বিজ্ঞানচর্চা অব্যাহত রেখে দেশের উন্নয়নে নিজেদের অংশীদার করে তুলবে।

বিজ্ঞান মেলায় বিভিন্ন স্টল ঘুরে দেখা যায় বর্তমান করোনা পরিস্থিতি স্বল্প খরচে হ্যান্ড স্যানিটাইজার তৈরি পদ্ধতি উপস্থাপন করেছে শাজাহানপুরের মাদলা চাঁচাইতারা যুক্ত উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। মাঝিড়া মডেল উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তৈরি করেছে কৃষকের জন্য বিদ্যুৎ-সাশ্রয়ী সেচ প্রকল্প। দুবলাগাড়ি কলেজের শিক্ষার্থীরা তৈরি করেছে 'স্মার্ট সিকিউরিটি সিস্টেম', যা দিয়ে এন্ড্রয়েড মোবাইল ফোনের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে অফিস বাড়ি বা যেকোনো স্থানের নিরাপত্তাব্যবস্থা। 'Pollution Free City'-এর মডেল তৈরি করেছে শিবগঞ্জ সরকারি এমএইচ মহাবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এদিকে বগুড়া লর মৌচাক বিজ্ঞান ক্লাবের সদস্যরা ব্যাংকের ভল্টের নিরাপত্তায় উপস্থাপন করেছে ডিজিটাল নেটওয়ার্ক সিকিউরিটি সিস্টেম টাচ অ্যান্ড লেজার ফর ব্যাংক ভল্ট।

এবারের মেলায় জুনিয়র গ্রুপে ১৪টি ও সিনিয়র গ্রুপে ১৩টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও ৫টি বিজ্ঞান ক্লাব তাদের তৈরিকৃত বিভিন্ন ধরনের প্রায় ৫০টি প্রকল্প উপস্থাপন করেছে। মেলায় অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা জানায়, করোনা পরিস্থিতিতে এমন মেলার আয়োজন হবে, তা ভাবা যায়নি। বিজ্ঞানভিত্তিক চর্চা বৃদ্ধিতে বিশেষ ভূমিকা পালন করবে এই আয়োজন।

এবারের বিজ্ঞান মেলায় জুনিয়র গ্রুপে 'অটোমেটেড সেন্ড অ্যাক্সিডেন্ট লোকেশন' উপস্থাপন করে প্রথম স্থান অর্জন করেছে বগুড়ার শেরপুর উপজেলার শেরউড ইন্টারন্যাশনাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ। 'আব্দুল একটি আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স' উপস্থাপন করে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেছে বগুড়া জিলা স্কুল ও 'গ্রিন প্রোটেকশন ওয়ার্মিং সিস্টেম' উপস্থাপন করে তৃতীয় হয়েছে বগুড়া বিয়াম মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ। সিনিয়র গ্রুপে 'ডক্টর অব এনভায়রমেন্ট' উপস্থাপন করে প্রথম হয়েছে বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজ। ‘টাইটান মাল্টিপারপাস রোবট’ উপস্থাপন করে দ্বিতীয় হয়েছে শেরপুর উপজেলার শেরউড ইন্টারন্যাশনাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ ও ‘স্পেশালাইজড ইভিএম’ উপস্থাপন করে তৃতীয় হয়েছে বিয়াম মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ। বিশেষ গুপে ডিজিটাল লার্নিং এনভায়রমেন্ট  উপস্থাপন করে প্রথম হয়েছে রোবোল্যাব, ডিজিটাল সিকিউরিটি সিস্টেম উপস্থাপন করে দ্বিতীয় হয়েছে মৌচাক বিজ্ঞান ক্লাব ও রিটেইন্ড হিট কুকার উপস্থাপন করে তৃতীয় হয়েছে শোভা এনজিও।

গতকাল সোমবার বিজ্ঞান অলিম্পিয়াডে প্রথম হয়েছেন দুঁপচাচিয়া ডিএস ফাজিল মাদ্রাসার শিক্ষার্থী মোস্তাকিম বিল্লাহ, দ্বিতীয় হয়েছেন বগুড়া আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন  স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী আবু হুরাইরা ও তৃতীয় হয়েছেন বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজের শিক্ষার্থী সাদমান সাকুর।

মঙ্গলবার বিকেল চারটায় বগুড়া জিলা স্কুল প্রাঙ্গণে বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়।  আগামীকাল বুধবার বিজ্ঞানভিত্তিক বিতর্ক প্রতিযোগিতা বগুড়া জিলা স্কুলে অনুষ্ঠিত হবে।

এনএ