কার্জন হলের সামনে শাওন

সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার লাউড়েরগড় গ্রামের শাওন। পুরো নাম রিফাত জাহান শাওন।  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। মাত্র ১৯ বছর বয়সেই ভ্রমণ করে ফেলেছেন ৬৪ জেলা। 

প্রকৃতির প্রতি ভালবাসা থেকে তার ভ্রমণের সূচনা। পরিশ্রম, মেধা আর তীব্র মনোবল নিয়ে ঘুরে বেড়িয়েছেন প্রত্যেকটি অঞ্চলে, কথা বলেছেন স্থানীয় মানুষদের সঙ্গে। দেখেছেন তাদের জীবনযাত্রা, জানার চেষ্টা করেছেন তাদের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক মূল্যবোধসহ ভাষা ও খাদ্যাভাস।

পাঠ্য বইয়ের পাশাপাশি বাস্তব জীবনের অর্জিত জ্ঞান খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন তিনি। ভ্রমণের শুরুটা হয়েছিল তার ২০১৯ সালের ১৬ জানুয়ারি নেত্রকোনার বিরিশিরির মাধ্যমে। সেখান থেকে ফিরেই স্থির করেন সারাদেশ ঘুরবেন। এরপরই তিনি প্রায় ৪৮ জেলা ঘোরেন। 

নীলগিরি

মার্চ মাস থেকে শুরু হয় বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের আতঙ্ক। দেশব্যাপী শুরু হয় লকডাউন। ফলে ২ মার্চ থেকে বন্ধ হয়ে যায় শাওনের ভ্রমণ। লকডাউন শেষে স্বাস্থ্যবিধি মেনে মোটরসাইকেলে পুনরায় ভ্রমণ শুরু করেন। গেল কয়েক মাসে প্রায় ৬০০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে বাকি ২৬ জেলা ঘুরেছেন।

শাওন বলেন, ‌'হাজার বছরের ইতিহাস ঐতিহ্যে ভরপুর বাংলাকে জানতে হলে ভ্রমণের বিকল্প নেই। প্রযুক্তির এই যুগে আমরা ঘর থেকে বের হতেই চাই না। কিন্তু সময় এখন মুক্ত বিহঙ্গের মতো ছুটে চলার।’

ভ্রমণ না করলে অনেক কিছুই জানা হতো না উল্লেখ করে শাওন বলেন, বাঙালি জাতি হিসেবে যদি নিজের দেশ ও জাতিসত্ত্বা সম্পর্কে না জানি তবে হাজার বছরের ইতিহাস একদিন বিলীন হয়ে যাবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগের ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী শাওন। বিশ্বের প্রতিটি দেশ ভ্রমণ করার ইচ্ছে তার। তাই বিশ্ব ভ্রমণের প্রস্তুতি হিসেবে সর্বপ্রথম নিজের মাতৃভূমির প্রতিটি জেলা বিচরণ করেছে শাওন।

যাত্রা পথের অভিজ্ঞতা নিয়ে ঢাকাপোস্টকে শাওন বলেন, বাংলার বুক থেকে হারিয়ে যাচ্ছে শত শত নদী, হারিয়ে যাচ্ছে বাঙালির হাজার বছরের সংস্কৃতি। বিশেষ করে উত্তরবঙ্গের যে নদীগুলো এক সময় পাল তোলা নৌকা নিয়ে ভেসে বেড়াত সেই নদীতে আজ পানি নেই। নদীর মধ্যখানে হয় ইটের ভাঁটা, না হয় ধানক্ষেত।'

জাফলং

বাংলার প্রাচীন স্থাপত্য রক্ষাবেক্ষণের অভাবে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। সভ্যতা ক্রমবিকাশে পুরনো স্থাপত্য রক্ষণাবেক্ষণ প্রয়োজন উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'ইতিহাস ঐতিহ্যেরও অবক্ষয় কিন্তু কম হচ্ছে না। মুঘল ও সুলতানি আমলের কারুকার্য খচিত অনেক মসজিদ অযত্নে পরে থাকতে দেখেছি; সেই কারুকার্যের ওপর বসিয়ে দেয়া হচ্ছে চকচকে টাইলস। এভাবে চলতে থাকলে হাজার বছরের এই স্থাপত্য টিকে থাকবে কি করে?' 

১২ ডিসেম্বর বরগুনা ভ্রমণের মধ্যদিয়ে তার ভ্রমণ শেষ হয়েছে। ১৬ ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ভ্রমণের আনুষ্ঠানিক পরিসমাপ্তি করেছেন তিনি। 

জন্ম নিবন্ধন অনুযায়ী শাওনের বয়স ১৯ বছর ৯ মাস ২৩ দিন। ৬৪ জেলায় ঘুরতে তার সময় লেগেছে ১ বছর ১১ মাস। 

ভ্রমণের অনুপ্রেরণা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'আমার বাবা-মা আমার সব থেকে বড় অনুপ্ররণার উৎস। আমার পরিবার সহযোগিতা না করলে এই অভিযানে সফল হতে পারতাম না। ভ্রমণের সকল ব্যয়ভার আমার পরিবার বহন করেছে। এছাড়া বাংলাদেশের সব জেলাতে বন্ধু ও শুভাকাঙ্ক্ষীরা সহযোগিতা করেছে।’

এসপি