ক্লাসরুম মুছে পরিষ্কার করা হচ্ছে

মহামারি করোনার কারণে দীর্ঘ ১০ মাস বন্ধ থাকার পর আগামী ১ ফেব্রুয়ারি (সোমবার) শুরু হচ্ছে মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট- এসএসসি, উচ্চমাধ্যমিক সার্টিফিকেট- এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার্থীদের ক্লাস। স্বাস্থ্যবিধি মেনে অন্তত তিন মাস ক্লাস নিয়ে পরীক্ষা নেওয়া হবে। এ পরীক্ষা হবে সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে। 

শিক্ষা মন্ত্রণালয়, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড- এনসিটিবি ও ঢাকা শিক্ষাবোর্ড সূত্রে এমন তথ্য জানা গেছে। এরই মধ্যে এনসিটিবি সংক্ষিপ্ত সিলেবাস তৈরির কাজও শেষ করেছে। 

২০২১ সালের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা সংক্ষিপ্ত পরিসরে নেওয়ার জন্য এনসিটিবি যে সংক্ষিপ্ত সিলেবাস তৈরি করেছে তা মঙ্গলবার বোর্ডে আসবে। এরপরই সারা দেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এ নির্দেশনা চলে যাবে এবং ১ ফেব্রুয়ারি থেকে তাদের ক্লাস শুরু হবে।

আন্তঃশিক্ষাবোর্ড সমন্বয় সাব কমিটির সভাপতি ও ঢাকা শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর নেহাল আহমেদ

এদিকে ২০২১ সালে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা না দিয়ে অটোপাসের দাবিতে আন্দোলনে নামছেন একদল শিক্ষার্থী। মঙ্গলবার (১৯ জানুয়ারি) জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন ও সংবাদ সম্মেলন করতে যাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। তারা ফেসবুকের মাধ্যমে সংগঠিত হয়েছেন। তবে সরকার তাদের অটোপাসের দাবি মেনে নেবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আন্তঃশিক্ষাবোর্ড সমন্বয় সাব কমিটির সভাপতি ও ঢাকা শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর নেহাল আহমেদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, ২০২১ সালের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা সংক্ষিপ্ত পরিসরে নেওয়ার জন্য এনসিটিবি যে সংক্ষিপ্ত সিলেবাস তৈরি করেছে তা মঙ্গলবার বোর্ডে আসবে। এরপরই সারা দেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এ নির্দেশনা চলে যাবে এবং ১ ফেব্রুয়ারি থেকে তাদের ক্লাস শুরু হবে।

অটোপাসের দাবির প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এ দাবি কোনোভাবেই যৌক্তিক না। পরীক্ষা ছাড়া অটোপাস করার মানে সারাজীবন গ্লানি  বয়ে বেড়ানো।

তিনি বলেন, জাতীয় স্বাস্থ্য কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী স্বাস্থ্যবিধি মেনে শুধু পরীক্ষার্থীদের ক্লাস নেওয়া হবে। পর্যায়ক্রমে অন্যান্য শ্রেণির ক্লাস খুলে দেওয়া হবে। কতদিন ক্লাস নিয়ে পরীক্ষা নেওয়া হবে-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে অন্তত তিন-চার মাস ক্লাস নিয়ে পরীক্ষা নেওয়া হবে।

ক্লাসরুমের এ চিত্র পরিবর্তন হবে সহসাই

আমাদের আকাঙ্ক্ষা ফেব্রুয়ারি থেকে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের পুরোদমে ক্লাস নেওয়ার। পরীক্ষার আগেভাগে রুটিন দিয়ে দেব, যাতে পরীক্ষার্থীরা প্রস্তুতি নিতে পারে। তবে সবকিছু নির্ভর করছে করোনা পরিস্থিতির ওপর।   

এদিকে ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘এসএসসি-২০২১ ব্যাচ’ ব্যানারে ‘করোনা পরিস্থিতিতে এসএসসি ও সমমান পরীক্ষা-২০২১ ও মূল্যায়ন পদ্ধতি’ বিষয় তাদের প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রীর কাছে জানাতে জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন ও মানববন্ধন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। রায়ান উৎস নামের এক পরীক্ষার্থী গণমাধ্যমে এ সংক্রান্ত প্রেস বিজ্ঞপ্তিও পাঠিয়েছেন।

এসএসসি পরীক্ষার্থীদের দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে- করোনার ভ্যাকসিন না আসা পর্যন্ত সশরীরে ক্লাস-পরীক্ষা নেওয়া যাবে না, পরীক্ষা নিতে হলে সিলেবাস শেষ করার মতো যৌক্তিক সময় দিয়ে পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করা, অল্পসময়ে পরীক্ষা নিলে সিলেবাস সংক্ষিপ্ত করে অন্তত তিন মাস আগে ঘোষণা করা, করোনার মধ্যে পরীক্ষা নিলে প্রত্যেক শিক্ষার্থীর স্বাস্থ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করা, অফিসিয়াল কোনো ঘোষণা না আসা পর্যন্ত স্কুলে সবরকম ফি নেওয়া বন্ধ রাখা এবং পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব না হলে পিএসসি ও জেএসসি পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে অটোপাস দেওয়া।

রাজধানীর বনানী বিদ্যানিকেতন স্কুল অ্যান্ড কলেজের এসএসসি পরীক্ষার্থী ও কর্মসূচির সমন্বয়ক রায়ান উৎস বলে, এখনও ভ্যাকসিন আসেনি। স্বাস্থ্যমন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছেন ১৮ বছরের নিচের কাউকে ভ্যাকসিন দেওয়া হবে না। আমরা যদি পরীক্ষা দিতে গিয়ে আক্রান্ত হই তাহলে পরীক্ষা দিতে পারব না। ১৪ দিন আমাদের কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে।

কোনো পরীক্ষার্থী করোনা আক্রান্ত হলে তার একটি বছর শেষ হয়ে যাবে। আরেকটি কারণ হচ্ছে- জুন মাসে পরীক্ষা হলে রেজাল্ট দিতে আগস্ট-সেপ্টেম্বর লেগে যাবে। কলেজে ভর্তি হতে অক্টোবর মাস শেষ হয়ে যাবে। সেক্ষেত্রে আমাদের সেশন জটে শিক্ষাজীবন প্রায় থেকে এক বছর শেষ হয়ে যাবে। আর এখনই যদি অটোপাস ঘোষণা করে কলেজে ভর্তির কার্যক্রম শুরু করা হয় তাহলে আমাদের সেশন জটে পড়তে হবে না।   

অভিভাবক ফোরামের সভাপতি জিয়াউল কবির দুলু বলেন, গত মার্চের পর ১০ম শ্রেণিতে কোনো ক্লাস হয়নি। অতএব পরীক্ষার্থীদের পর্যাপ্ত সময় দিয়ে সিলেবাস শেষ করে পরীক্ষা নিতে হবে। সেক্ষেত্রে বিলম্বে পরীক্ষা নিতে হলেও সরকারে অপেক্ষা করা উচিত। না পড়িয়ে পরীক্ষা নেওয়া ঠিক হবে না। কারণ এখন এই স্তরের পড়াশোনা ওপরের শ্রেণিতে দরকার হবে। অটোপাসের বিরোধিতা করে তিনি বলেন, করোনা চিরদিন থাকবে না।

আগামী মাসে অভিভাবক, শিক্ষক, শিক্ষা কর্মকর্তারা ভ্যাকসিন পাবেন তখন আতঙ্ক কেটে যাবে। সরকার ফেব্রুয়ারি মাস থেকে দশম ও দাদ্বশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের শর্ট সিলেবাসে ক্লাস শুরু করার কথা বলেছে। আমরা সরকারে এই সিদ্বান্তের সঙ্গে একমত, বলেন তিনি।

সংক্ষিপ্ত সিলেবাসের বিষয়ে জানতে চাইলে এনসিটিবির (ঊর্ধ্বতন বিশেষজ্ঞ) সৈয়দ মাহফুজ আলী ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিশেষজ্ঞদের মতামতের ভিত্তিতে প্রতিটি বিষয়ের সিলেবাস থেকে ২০ থেকে ৩০ শতাংশ কমিয়ে সংক্ষিপ্ত সিলেবাস তৈরি করেছি। যেসব বিষয়গুলো না শিখলেই নয় সেগুলো সিলেবাসে রাখা হয়েছে। 

তিনি আরও বলেন, ফেব্রুয়ারিতে স্কুল খোলা সম্ভব হলে দুই থেকে আড়াই মাস যাতে ক্লাস পাঠদান করিয়ে পরীক্ষা নেওয়া যায় সেভাবে সংক্ষিপ্ত সিলেবাস তৈরি করা হয়েছে। আর করোনার কারণে যদি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্কুল না যায় সেক্ষেত্রে সংক্ষিপ্ত সিলেবাস অনুযায়ী অনলাইনে ক্লাস নেওয়ার প্রস্তাব করেছি। শিক্ষকরা অ্যাসাইনমেন্ট দিয়ে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত করবে।

 

এনএম/জেডএস/এমএআর