রাস্তায় টানা বিক্ষোভের পাশাপাশি অনলাইনেও অভ্যুত্থানবিরোধী প্রচারণা চালাচ্ছে সাধারণ মানুষ

মিয়ানমারে টানা দ্বিতীয় রাতের মতো ইন্টারনেট বন্ধ রেখেছে দেশটির জান্তা সরকার। মঙ্গলবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) স্থানীয় সময় রাত একটা থেকে দেশটিতে ইন্টারনেট সংযোগ পুরোপুরি বন্ধ ছিল বলে জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছে ব্রিটেনভিত্তিক পর্যবেক্ষক সংস্থা ‘নেটব্লকস’ও। সংস্থাটি জানিয়েছে, স্থানীয় সময় মঙ্গলবার রাত একটা থেকে মিয়ানমারজুড়ে ইন্টারনেট সংযোগ প্রায় পুরোপুরি বন্ধ ছিল। গত এক ফেব্রুয়ারি সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলের পর মানুষের ক্ষোভ দমাতে এনিয়ে চতুর্থবারের মতো ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ করে দিয়েছে সামরিক জান্তা সরকার। রাস্তায় টানা বিক্ষোভের পাশাপাশি অনলাইনেও অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালাচ্ছে মিয়ানমারের সাধারণ মানুষ। এর পরিপ্রেক্ষিতেই ইন্টারনেট সংযোগ বাধাগ্রস্ত করা হচ্ছে বলে জানা গেছে।

এর আগে সোমবারও মিয়ানমারজুড়ে কয়েক ঘণ্টার জন্য ইন্টারনেট বন্ধ এবং সেনা মোতায়েন করার নির্দেশ দেওয়া হয়। গত ১ ফেব্রুয়ারি সামরিক অভ্যুত্থানের পর রাজনৈতিক নেতাদের গ্রেপ্তার করায় দেশটির জনগণ ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে। এই বিক্ষোভ থামাতে সামরিক জান্তা ধীরে ধীরে নিপীড়নমূলক অভিযান জোরদার করছে।

বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, ট্যাংক ও সেনা মোতায়েনের দৃশ্য সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর সামরিক জান্তা দেশটিতে ইন্টারনেট বন্ধ করে দেয়। এমনকি মিয়ানমারের দক্ষিণাঞ্চলীয় কাচিন প্রদেশে বিক্ষোভকারীদের ওপর সেনাবাহিনী গুলি চালিয়েছে বলেও খবর বেরিয়েছে।

সোমবার কয়েকটি মানবাধিকার সংগঠন জানায়, (রোববার রাতে) আট ঘণ্টার জন্য সারা দেশে ইন্টারনেট বন্ধ করে দেওয়া হয়। তারা আরও জানিয়েছে, রাতের বেলা ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হলেও দিনের শুরুতে অফিস-আদালতের কাজ-কর্ম শুরু হলে ইন্টারনেট সেবা পুনর্বহাল করা হয়।

একইভাবে মঙ্গলবার সকালে দাপ্তরিক কাজ-কর্ম শুরু হলে রাতে বন্ধ করা সংযোগ আবারও পুনর্বহাল করা হতে পারে।

রোববার ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে সেনাবাহিনীকে উদ্দেশ্য করে বলা হয়, মিয়ানমারের গণতন্ত্রকামী বিক্ষোভকারীরা দেশটির বৈধ সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার প্রতিবাদে বিক্ষোভ করছেন; তাদের প্রতি যেন সহিংস আচরণ করা না হয়।

মিয়ানমারে সেনা অভ্যুত্থানের প্রতিবাদে বেশ কয়েকদিন ধরে অব্যাহত রয়েছে বিক্ষোভ। রোববার হাজার হাজার বিক্ষোভকারী রাস্তায় নেমেছেন। কাচিন রাজ্যের মিতকিনা শহরে নিরাপত্তা বাহিনী ও বিক্ষোভকারীদের মধ্যে সংঘর্ষের সময় গুলির শব্দ শোনা গেছে। সেখানে রাবার বুলেট, না গুলি ছোড়া হয়েছে, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। পাঁচজন সাংবাদিককে আটক করার খবর পাওয়া গেছে।

অভ্যুত্থানের পর সোমবার প্রথমবারের মতো ইয়াঙ্গুনে সেনাবাহিনীর সশস্ত্র গাড়ি টহল দিতে দেখা গেছে। এর আগের দিন সেখানে বৌদ্ধভিক্ষু ও প্রকৌশলীদের মিছিল করতে দেখা গেছে।

মিয়ানমারে সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে যারা বিক্ষোভের ডাক দিয়েছেন এবং বিক্ষোভ সংঘটিত করেছেন, তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে জান্তা সরকার। এই বিক্ষোভকারীদের যাতে আশ্রয় না দেওয়া হয়, সে জন্য জনসাধারণকে সতর্ক করেছে সামরিক সরকার।

সূত্র: বিবিসি

টিএম