বায়ু দূষণের কারণে বন্ধ্যাত্বের ঝুঁকি উল্লেখযোগ্য হারে বেড়ে যায়। সাধারণ মানুষ বায়ু দূষণের কারণে কতটা হুমকির মুখে আছে, এ নিয়ে করা একটি গবেষণায় এমন তথ্যই উঠে এসেছে।

চীনের ১৮ হাজারের বেশি দম্পতির তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে যে, ক্ষুদ্র কণার মাধ্যমে উচ্চমাত্রার বায়ু দূষণে বন্ধ্যাত্বের ঝুঁকি ২০ শতাংশ বেশি। চেষ্টা করেও এক বছরের মধ্যে গর্ভবতী না হওয়ার বিষয়টি এতে বেশ স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।  

বায়ু দূষণ কীভাবে প্রজননের ক্ষতি করে তা জানতে বিজ্ঞানীরা গবেষণাটি না করলেও দূষণের জন্য দায়ী কণাগুলো শরীরে প্রদাহ সৃষ্টি করে; যা ডিম্বাণু ও শুক্রাণু উৎপাদনকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে বলে জানা গেছে।

বন্ধ্যাত্বের শিকার ৩০ শতাংশ দম্পতির বন্ধ্যাত্বের কারণ সম্পর্কে নিশ্চিত করে কিছু জানা যায়নি। আমাদের গবেষণায় দেখা গেছে, দূষণের ক্ষুদ্র কণাগুলো বন্ধ্যাত্বের যে ঝুঁকি বাড়ায় তা এড়িয়ে যাওয়ার কোনো উপায় নেই

গবেষক দলের প্রধান

যুক্তরাষ্ট্রের একটি বন্ধ্যাত্ব বিষয়ক ক্লিনিকে যাওয়া ৬০০ নারীকে নিয়ে করা অপর একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, নারীরা যত বেশি বায়ুদূষণের শিকার হবেন ততই ডিম্বাশয়ে পরিপক্ক ডিম্বাণু উৎপাদনের সংখ্যা কমে যাবে। 

বিশ্বজুড়ে লাখ লাখ দম্পতি বন্ধ্যাত্বের শিকার হলেও এর পেছনে বায়ু দূষণের প্রভাব কেমন তা জানার জন্য তুলনামূলকভাবে গবেষণা হয়েছে অনেক কম। ফলে বিষয়টির ভয়াবহতা নিয়ে তেমন কোনো তথ্য নেই। 

তবে দূষিত বাতাসের কারণে যে অকাল জন্ম ও নবজাতকের কম ওজনসহ প্রজননের অন্যান্য দিকগুলোর ঝুঁকি বাড়ে এটা অবশ্য সর্বজনবিদিত। এছাড়া নাইট্রোজেন ডাই অক্সাইডের সাধারণ স্তরগুলো গর্ভপাতের ঝুঁকি বাড়াতে ধূমপানের মতোই খারাপ এবং গর্ভফুল ভ্রূণের পাশে দূষণের জন্য দায়ী কণা আগেই পাওয়া গেছে।

বায়ুদূষণের কারণে বন্ধ্যাত্বের ঝুঁকি বৃদ্ধি সংক্রান্ত এই গবেষণাটি করেছে চীনের পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ের থার্ড হাসপাতালের সেন্টার ফর রিপ্রোডাকটিভ মেডিসেনের একদল গবেষক। যার নেতৃত্ব দিয়েছেন কিন লি।

সম্ভাব্য পিতা-মাতাদের বায়ু দূষণ সম্পর্কে উদ্বিগ্ন হওয়া উচিত। বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, গর্ভাবস্থায় প্রচুর বিরূপ প্রভাবের কারণ এই বায়ু দূষণ

গবেষক কিন লি ব্রিটিশ দৈনিক গার্ডিয়ানকে বলেন, ‘সম্ভাব্য পিতা-মাতাদের বায়ু দূষণ সম্পর্কে উদ্বিগ্ন হওয়া উচিত। কারণ অনেকগুলো গবেষণায় দেখা গেছে যে, গর্ভাবস্থায় প্রচুর বিরূপ প্রভাবের কারণ এই বায়ু দূষণ।’ 

বয়স, ওজন ও ধূমপানকে অধিক পরিচিত ফ্যাক্টর হিসেবে উল্লেখ করে গবেষণা নিবন্ধে লেখা হয়েছে, ‘বন্ধ্যাত্বের শিকার আনুমানিক ৩০ শতাংশ দম্পতির বন্ধ্যাত্বের কারণ সম্পর্কে নিশ্চিত করে কিছু জানা যায়নি। আমাদের গবেষণায় দেখা গেছে, দূষণের ক্ষুদ্র কণাগুলো বন্ধ্যাত্বের যে ঝুঁকি বাড়ায় তা এড়িয়ে যাওয়ার কোনো উপায় নেই।’

কিন লি বলেন, আগের গবেষণাগুলোতে মিশ্র ফল পাওয়া গেলেও যাদেরবে নিয়ে গবেষণা করা হয়েছে তাতে বন্ধ্যাত্বের শিকার দম্পতিদের বাদ দেওয়া হয়েছে নয়তো গবেষণা করা হয়েছে বন্ধ্যাত্ব সংক্রান্ত ক্লিনিকগুলোতে। কিন্তু আমরা গবেষণা করেছি সাধারণ মানুষকে নিয়ে। তাই আমাদের ফলটা অনেক বেশি সাধারণীকৃত।   

উল্লিখিত গবেষণা নিবন্ধটি প্রকাশিত হয়েছে এনভাইরোনমেন্ট ইন্টারন্যাশনাল নামের একটি পরিবেশ বিষয়খ জার্নালে। গবেষণায় বিষয়টি নিয়ে নানা ধরনের প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন ১৮ হাজার ৫৭১ দম্পতি।

এএস