সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ইহুদি বিদ্বেষের শিকার হতে হচ্ছে চলতি বছরের মিস ফ্রান্স প্রতিযোগিতার রানার আপকে। এ নিয়ে অনেকের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দেয়ার পর পুলিশকে ঘটনার তদন্তে নামতে হয়েছে।     

শনিবার একটি টেলিভিশন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রতিযোগিতার দ্বিতীয় স্থান অধিকারী ২১ বছর বয়সী এপ্রিল বেনায়েমের হাতে পুরস্কার তুলে দেয়া হয়। এই অনুষ্ঠানেই নিজের ইসরায়েলি বংশোদ্ভূতের পরিচয় দেন বেনায়েম। আর তারপরই টুইটারে তাকে উদ্দেশ্য করে আক্রমণ শুরু হয়। 

ফরাসি বহু রাজনীতিবিদ এবং ইহুদি গোষ্ঠী এসব টুইটের বিষয়ে নিন্দা জানিয়েছেন।

পরে একটি সাক্ষাতকারে বেনায়েম বলেছেন যে তিনি তার আত্মীয়দের কাছ থেকে ইহুদিবিরোধী এসব অপমানের কথা শুনেছেন।

তিনি আরও বলেন, ২০২০ সালে এসেও এ জাতীয় আচরণ দেখে দুঃখ হয়। আমি অবশ্যই এসব মন্তব্যের নিন্দা জানাই, তবে এসব আমার ওপর মোটেও কোনো প্রভাব ফেলছে না। 

ফ্রান্সের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জেরাল্ড ডারমানিয়ান এ বিষয়ে বলছেন, তিনি বেনায়েমের বিরুদ্ধে চালানো বিদ্বেষ দেখে হতবাক। এক টুইটে তিনি লিখেছেন, আমরা অবশ্যই এটা ছেড়ে দেব না। পুলিশ টুইটগুলোর বিষয়ে তদন্ত করছে। 

প্রতিযোগিতার আয়োজকরা বেনায়েমের বিরুদ্ধে চালানো বিদ্বেষের নিন্দা জানিয়ে বলেছেন যে এটা তাদের চ্যানেল, প্রযোজনা এবং অনুষ্ঠানের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়।

চলতি বছরের আয়োজনটি প্রতিযোগিতার শতবর্ষী সংস্করণ হিসাবে উদযাপিত হচ্ছিল। ১৯২০ সালে সাংবাদিক মরিস ডি ওয়ালফি এ প্রতিযোগিতার প্রথম আয়োজন করেছিলেন। 

মিস নরম্যান্ডি বা আমানডাইন পেতিত চলতি বছরের প্রতিযোগিতার বিজয়ী হয়েছেন। পুরস্কার হিসেবে তিনি নগদ টাকার পাশাপাশি প্যারিসে একটি অ্যাপার্টমেন্ট ব্যবহারের সুযোগ পাচ্ছেন এবং এক বছরের জন্য প্রতিমাসে তিনি বেতন পাবেন। তিনি ফ্রান্সের বিএফএম টিভিকে বলেছেন যে অযথা এসব মন্তব্য খুবই হতাশাজনক।

রাজনীতিবিদরাও বেনায়েমের পাশে দাঁড়িয়েছেন। দেশটির নাগরিকত্ব বিষয়ক মন্ত্রী মার্লেন শিয়াপ্পা টুইট করেছেন- এটা সৌন্দর্য প্রতিযোগিতা, ইহুদি-বিদ্বেষের কোনো প্রতিযোগিতা নয়।

প্রোভেনস অঞ্চলের ইউরোপীয় সংসদের প্রাক্তন ফরাসী সদস্য রেনাড মিউজিয়েলার ঘটনাটিকে জঘন্য বলে আখ্যায়িত করেছেন। তিনি জোর দিয়ে বলেছেন, বেনায়েম ফরাসী। তিনি ইতালীয় এবং ইসরায়েলি বংশোদ্ভূত। তিনি প্রোভেন্সের, দক্ষিণাঞ্চলের। যার অর্থ তিনি নিখুঁতভাবে আমাদের অঞ্চল এবং আমাদের দেশের প্রতিনিধিত্ব করতে পারেন।  

ইহুদি বিভিন্ন গোষ্ঠী এর কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। ইন্টারন্যাশনাল লিগ এগেইনস্ট রেসিজম অ্যান্ড অ্যান্টি-সেমিটিজম (লিকরা) বলেছে, মিস ফ্রান্স প্রতিযোগিতাটি টুইটারকে মিস প্রোভেন্সের বিপক্ষে ইহুদিবিরোধী সিসপুলে পরিণত করেছে।

ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে ফ্রান্সে সবচেয়ে বেশি ইহুদির বাস, এ  সংখ্যা প্রায় ৫ লাখ। তবে সাম্প্রতিক বছরগুরোতে দেশটিতে বেশ কিছু ইহুদিবিদ্বেষের ঘটনা ঘটেছে। ইহুদিদের বিরুদ্ধে সহিংসতা ও হয়রানির নিয়ে চাপের মুখেও পড়তে হয়েছে ফ্রান্সকে। 

২০১৮ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর এক সমীক্ষায় দেখা গেছে ৯৫ শতাংশ ফরাসি ইহুদি এই ইহুদিবিদ্বেষকে মোটামুটি বা খুব বড় একটা সমস্যা বলে মনে করে।  একই বছর ফ্রান্সের সাবেক প্রধানমন্ত্রী এডোয়ার্ড ফিলিপ বলেছিলেন যে ইহুদিবিদ্বেষী ঘটনাগুলো ৬৯ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।  

সূত্র : বিবিসি।  

এনএফ