২০০ ক্যান্সার রোগীর হাসপাতাল বিল মওকুফ করলেন চিকিৎসক
করোনাভাইরাস মহামারি যেন বিশ্বকেই বদলে দিয়েছে। একে-অন্যকে চিনেছে নতুন করে। করোনাকালীন এই সময়ে যেমন মহামারিকে পুঁজি মানুষের সঙ্গে প্রতারণায় মেতে উঠেছে কেউ কেউ, আবার তেমনি লোভ-লালসা পেছনে ফেলে মানবিকতাকে আঁকড়ে ধরে মানুষর ভালোবাসায় সিক্তও হয়েছেন অনেকে। তেমনি একজন মানুষের দেখা মিলেছে যুক্তরাষ্ট্রের আরকানসাস অঙ্গরাজ্যে।
করোনা দুর্যোগের মধ্যে এক মার্কিন চিকিৎসক ২০০ জন গরীব ক্যান্সার রোগীর হাসপাতাল বিল মওকুফ করে দিয়েছেন বলে জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি। মওকুফ করে দেওয়া অর্থের পরিমাণ প্রায় সাড়ে পাঁচ কোটি টাকা।
বিজ্ঞাপন
তবে এর জন্য চড়া মাশুলও দিতে হয়েছে ওই চিকিৎসককে। প্রায় ৩০ বছর ধরে চালানো ক্লিনিকটি গত বছর বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছেন তিনি।
করোনা মহামারির মধ্যে ২০০ জন গরীব ক্যান্সার রোগীর প্রায় সাড়ে পাঁচ কোটি টাকার হাসপাতাল বিল মওকুফকারী ওই চিকিৎসকের নাম ডা. ওমর আতিক। পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত এই মার্কিন চিকিৎসক ১৯৯১ সালে আরকানসাস অঙ্গরাজ্যের পাইন ব্লাফ শহরে আরকানসাস ক্যান্সার ক্লিনিক প্রতিষ্ঠা করেন।
বিজ্ঞাপন
বিবিসি তাদের প্রতিবেদনে জানিয়েছে, করোনাভাইরাস মহামারির কারণে তার হাসপাতালের রোগীদের একটি বড় অংশ চিকিৎসার খরচ মেটাতে হিমশিম খাচ্ছেন বলে বুঝতে পারছিলেন ডা. ওমর আতিক। এরপর স্ত্রীর সঙ্গে পরামর্শ করে তিনি সিদ্ধান্ত নেন ২০০ রোগীর প্রায় সাড়ে ৫ কোটি টাকার বিল মওকুফের।
কিন্তু এরপরও তাকে আরও চড়া মাশুলও দিতে হয়েছে। বিল মওকুফের কারণে প্রায় ৩০ বছর ধরে চালানো ক্লিনিকটি আর সচল রাখতে পারেননি তিনি। তাই বাধ্য হয়ে ক্লিনিকটি বন্ধ করে দেন তিনি।
এবিসি নিউজ ও ডেইলি মেইলের সংবাদে বলা হয়েছে, রোগীদের কাছ থেকে বকেয়া টাকা আদায়ের জন্য ডা. আতিক একটি পাওনা আদায়কারী প্রতিষ্ঠানের সাহায্য নিয়েছিলেন। কিন্তু হিসাব নিকেশ করে রোগীদের আর্থিক দুর্দশার কথা বুঝতে পেরে ক্রিসমাসের সময় ২০০ রোগীকে চিঠি দিয়ে তাদের বকেয়া বিল মওকুফ করার কথা জানিয়ে দেন তিনি।
আরকানসাস ক্যান্সার ক্লিনিকে কেমোথেরাপি, রেডিয়েশন থেরাপির মতো চিকিৎসা সেবা দেওয়া হতো। ক্লিনিক পরিচালনার পাশাপাশি ডা. আতিক লিটল রকের ‘ইউনিভার্সিটি অব আরকানসাস ফর মেডিকেল সায়েন্সেস’-এ একজন অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত আছেন।
এবিসি’র গুড মর্নিং আমেরিকা অনুষ্ঠানে তিনি বলেছেন,‘আমার মনে হল মহামারির মধ্যে বহু মানুষ ঠিকানা হারিয়েছে, আপনজন মারা গেছেন অনেকের এবং ব্যবসা-বাণিজ্য সব হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছেন অনেক মানুষ। ফলে বকেয়া মওকুফের জন্য এর চেয়ে ভালো সময় আর কী হতে পারে!’
আর এই মহৎ কাজের জন্য অ্যাডভোকেসি গ্রুপ আরকানসাস মেডিকেল সোসাইটি থেকে শুরু করে পাওনা আদায়কারী প্রতিষ্ঠানসহ সবার প্রশংসা পেয়েছেন ডা. আতিক। যদিও শেষ পর্যন্ত অর্থ সংকটে নিজের ক্লিনিকটি বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছেন তিনি।
টিএম