ক্ষমতা থেকে বিদায় নেওয়ার আগে প্রায় ১০০টি ক্ষমার আদেশ জারির প্রস্তুতি নিচ্ছেন বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এর মধ্যে দণ্ড মওকুফ, বিচার থেকে দায়মুক্তিসহ দণ্ড কমানোর আদেশ থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।

তবে ক্ষমা ঘোষণার এই তালিকায় প্রায় শ’খানেক লোকের নাম থাকলেও সেখানে নিজের নাম অন্তর্ভুক্তির কোনো পরিকল্পনা ট্রাম্পের নেই বলে সূত্রের বরাত দিয়ে জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।

ক্ষমতা থেকে বিদায়ের আগে শেষ পূর্ণ কর্মদিবস মঙ্গলবার (১৯ জানুয়ারি) ক্ষমা ঘোষণার এই তালিকা প্রকাশ করা হতে পারে।

হোয়াইট হাউসের উপদেষ্টারা বলছেন, নিজেকে ক্ষমা ঘোষণার মতো নজিরবিহীন কোনো পদক্ষেপ নেওয়া যায় কিনা, সে বিষয়ে ইতোপূর্বে উপদেষ্টাদের সঙ্গে আলোচনা করেছিলেন ট্রাম্প। কিন্তু এ ধরনের কোনো পদক্ষেপ নেওয়া থেকে বিরত থাকতে ট্রাম্পের প্রতি আহ্বান জানান তারা। কারণ এর ফলে ট্রাম্পকে দোষী হিসেবে প্রমাণের সুযোগ বাড়বে বলে মন্তব্য করেন তারা।

বিশেষজ্ঞদের অনেকেই বলছেন, ক্ষমতার অপব্যবহার করে নিজেকে ক্ষমা ঘোষণা করা হলে তা হবে অসাংবিধানিক। কারণ এটি নৈতিকতার লঙ্ঘন। তাদের মতে, একজন ব্যক্তি কখনোই তার নিজের কাজের বিচারক হতে পারে না।

বিশেষজ্ঞদের অন্য অংশ বলছে, প্রেসিডেন্ট যদি নিজেকে ক্ষমা ঘোষণা করলে সেটা অসাংবিধানিক হবে না। কারণ প্রেসিডেন্টের ক্ষমা করার ক্ষমতা অনেক বিস্তৃত।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম প্রেসিডেন্ট হিসেবে দ্বিতীয়বারের মতো প্রতিনিধি পরিষদে অভিশংসিত হয়ে লজ্জার বিরল ইতিহাস গড়েছেন ট্রাম্প। এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে মাত্র দু’জন প্রেসিডেন্ট অভিশংসিত হয়েছিলেন।

কিন্তু মাত্র এক বছরের কিছু বেশি সময়ের মধ্যে দেশটির প্রথম প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্প লজ্জাজনকভাবে দু’বার অভিশংসিত হয়েছেন।

ট্রাম্পের বিরুদ্ধে আনা অভিশংসনের অভিযোগে বলা হয়, তিনি বারবার নির্বাচনে জয়ের মিথ্যা দাবি করেছেন এবং সমর্থকদের গত ৬ জানুয়ারির ক্যাপিটল ভবনে হামলা ও সহিংসতায় ইন্ধন দিয়েছেন।

শুধু তাই নয়, নিজেকে বিজয়ী ঘোষণা করতে জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যের রিপাবলিকান দলীয় প্রতিনিধিকে চাপ প্রয়োগও করেছিলেন ট্রাম্প।

ট্রাম্পের ভাগ্য এখন ঝুলে আছে কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেটের হাতে। সিনেটে অভিশংসিত হলে ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন না তিনি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি সূত্রের বরাত দিয়ে বার্তাসংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, ক্ষমতা ছাড়ার মাত্র দুইদিন বাকি থাকলেও ট্রাম্প এখনও নিজেকে ক্ষমা ঘোষণা করার কোনো পরিকল্পনা করেননি। এমনকি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নিজের পরিবারের সদস্যদেরও ক্ষমা ঘোষণার পরিকল্পনাও করেননি তিনি।

গত মাসে দুই দফায় ক্ষমার ঘোষণা করে আদেশ জারি করেছিলেন ট্রাম্প। সর্বশেষ আরও শ’খানেক মানুষকে ক্ষমা ঘোষণার জন্য তালিকা চূড়ান্ত করতে রোববার হোয়াইট হাউসে উপদেষ্টাদের সঙ্গে বৈঠক করেন ট্রাম্প।

মার্কিন কর্মকর্তারা বলছেন, হোয়াইট হাউস থেকে বিদায়ের আগে ক্ষমা ঘোষণা করা হবে; বড়দিনের উৎসব পর্যন্ত এ নীতি ধরেই এগোচ্ছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। কিন্তু গত ৬ জানুয়ারি মার্কিন কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে ট্রাম্প সমর্থকদের হামলা ও সহিংসতার পর এই কার্যক্রমে ভাটা পড়ে। সেদিনের ওই ঘটনায় পুলিশ কর্মকর্তাসহ নিহত হয় পাঁচ জন।

কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে রয়টার্স বলছে, কংগ্রেসে ইলেকটোরাল কলেজ ভোট গণনার দিনসহ আগের দিনগুলোতে ট্রাম্প একা একাই কেবল সেদিকে নজর রাখছিলেন। এর ফলে ক্ষমার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে দেরি করেন ট্রাম্প।

কিন্তু ৬ জানুয়ারির ঘটনার পর ট্রাম্পের বিরুদ্ধে দাঙ্গা-হামলায় উস্কানি দেওয়ার অভিযোগ উঠলে ক্ষমা ঘোষণার কাজ থেকে পিছু হটেন তিনি।

প্রাথমিক ভাবে দুই ধাপে দুটি গ্রুপকে ক্ষমা ঘোষণার বিষয়ে চূড়ান্ত করা হয়েছিল। যার প্রথমটা করার কথা ছিল গত সপ্তাহের শেষ নাগাদ এবং দ্বিতীয়টি ট্রাম্পের শেষ কর্মদিবস অর্থ্যাৎ মঙ্গলবার। কিন্তু আগের পরিকল্পনা বাদ দিয়ে কেবল মঙ্গলবারই চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের কথা চিন্তা করা হচ্ছে।

প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্প এ পর্যন্ত ৯৪ জন সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে হয় মুক্তি দিয়েছেন, না হয় সাজা কমিয়ে দিয়েছেন।

আগামী ১৯ জানুয়ারি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের শেষ পূর্ণ কর্মদিবস। আর পরদিন ২০ জানুয়ারি দুপুরে নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেবেন জো বাইডেন। এর আগপর্যন্ত সাধারণ ক্ষমাপত্রে ম্বাক্ষর করতে পারবেন ট্রাম্প।

এর আগেও ক্ষমা করেছেন ট্রাম্প। নিজের রাজনৈতিক সহযোগী ও বন্ধুদের ধারাবাহিকভাবে ক্ষমা করার পর ২০১৮ সালে এক টুইট বার্তায় ট্রাম্প লিখেছিলেন, ‘নিজেকে ক্ষমা করার চূড়ান্ত ক্ষমতা আমার রয়েছে।’

সূত্র: রয়টার্স

টিএম