যুক্তরাষ্ট্রের হবু পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন

• উত্তর কোরিয়া ইস্যুতে ওয়াশিংটনের নীতি পরিবর্তনের ইঙ্গিত
• পরমাণু কর্মসূচি ত্যাগ করে আলোচনায় ফিরতেও দেওয়া হবে চাপ
• মহামারিতে বিপর্যস্ত দেশটিকে মানবিক সহায়তার কথাও ভাববে যুক্তরাষ্ট্র
• পিয়ংইয়ং ইস্যুকে সবচেয়ে গুরুত্ব দিতে পারেন বাইডেন

জো বাইডেনের নেতৃত্বে নতুন প্রশাসন দায়িত্ব নেওয়ার পর উত্তর কোরিয়ার প্রতি ওয়াশিংটনের নীতি সার্বিকভাবে পুনর্বিবেচনা করে দেখা হবে বলে জানিয়েছেন দেশটির হবু পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন। একইসঙ্গে পরমাণু অস্ত্র কর্মসূচি পরিত্যাগ করে আলোচনার টেবিলে ফিরে আসতে পিয়ংইয়ংয়ের ওপর চাপ প্রয়োগ করা হবে বলেও জানান তিনি।

অ্যান্টনি ব্লিনকেনকে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে মনোনীত করেছেন দেশটির নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। মঙ্গলবার (১৯ জানুয়ারি) সেই মনোনয়ন নিশ্চিতের জন্য আয়োজিত শুনানিতে একথা বলেন তিনি।

শুনানিতে অ্যান্টনি ব্লিনকেন বলেন, উত্তর কোরিয়াকে মানবিক সহায়তা দেওয়ার বিষয়েও চিন্তা করে দেখবে যুক্তরাষ্ট্র।

চলমান করোনা মহামারির কারণে ১৯৯০ দশকের দুর্ভিক্ষের পর এবারই প্রথম খাদ্য সংকট মেকাবিলায় কঠিন সময় পার করছে পিয়ংইয়ং। ৯০’র দশকের সেই দুর্ভিক্ষে দেশটিতে কমপক্ষে ৩০ লাখ মানুষ মারা যায়।

শুনানিতে আইনপ্রণেতাদের ব্লিনকেন বলেন, ‘আমি মনে করি, উত্তর কোরিয়াকে নিয়ে ওয়াশিংটনের নীতি বদলাতে হবে এবং আমরা এই নীতি বদলাতে ইচ্ছুক। এটা (উত্তর কোরিয়া) অনেক কঠিন একটা সমস্যা এবং তা বছরের পর বছর ধরে চলছেই। এছাড়া এই সমস্যাটি যুক্তরাষ্ট্রের জন্য দিনে দিনে কেবল খারাপই হয়েছে, কখনোই ভালো হয়নি।’

চলতি মাসের শুরুতে উত্তর কোরিয়ার সবচেয়ে বড় শত্রু হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের নাম ঘোষণা করেন দেশটির সর্বোচ্চ নেতা কিম জং উন। এসময় আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও পরমাণু ও ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি পিয়ংইয়ং আরও বিস্তৃত করবে বলেও অঙ্গীকার করেন তিনি।

এর কয়েকদিন পরই সাবমেরিনচালিত নতুন আরও একটি ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রকাশ্যে আনে দেশটি। উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম ক্ষেপণাস্ত্রটিকে ‘বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী অস্ত্র’ হিসেবে আখ্যায়িত করে।

উত্তর কোরিয়ার সর্বোচ্চ নেতা কিম জং উনের উপস্থিতিতে নতুন এই ক্ষেপণাস্ত্রটি একটি কুচকাওয়াজ-এ প্রদর্শন করা হয়। উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত ছবিতে দেখা যায়, সাদা ও কালো রংয়ের কমপক্ষে চারটি ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র প্যারেডে প্রদর্শন করা হচ্ছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সর্বশেষ প্রদর্শিত এই ক্ষেপণাস্ত্র এর আগে সামনে আনা হয়নি।

এর আগে গত সপ্তাহে এক অনুষ্ঠানে দেশটির সর্বোচ্চ নেতা কিম জং উন বলেন,‘যুক্তরাষ্ট্রকে পরাজিত করার লক্ষ্য নিয়েই আমাদের কাজ করতে হবে। তারা (যুক্তরাষ্ট্র) আমাদের প্রধান শত্রু এবং উন্নয়নের বড় বাধা।’

জো বাইডেন ক্ষমতাগ্রহণের মাত্র ১১ দিন আগে এমন মন্তব্য করেন তিনি। এর আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পরেও তার সঙ্গে কথার যুদ্ধে জড়িয়েছিলেন কিম। পরে অবশ্য ট্রাম্প-কিমের মধ্যে সুসম্পর্ক গড়ে উঠে।

বাইডেনের ক্ষমতাগ্রহণের দিকে ইঙ্গিত করে কিম জং উন বলেন,‘যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতায় কে রয়েছে সেটা কোনো বিষয় না। ক্ষমতায় যেই থাকুক না কেন উত্তর কোরিয়ার প্রতি ওয়াশিংটনের নীতি কখনোই পরিবর্তন হবে না।’

এসময় পিয়ংইয়ংয়ের পারমাণবিক সক্ষমতা আরও বাড়ানোসহ সাম্রাজ্যবাদবিরোধী কর্মকাণ্ড বিস্তৃত করার অঙ্গীকার করেন তিনি।

বিশ্লেষকদের ধারণা, সামরিক ও প্রতিরক্ষা শক্তি প্রদর্শনের মাধ্যমে উত্তর কোরিয়া হয়তো পারমাণবিক বোমা ও ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা কার্যক্রম পুনরায় চালুর ইঙ্গিত দিচ্ছে। ২০১৮ সালে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকের আগে ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা কর্মসূচি স্থগিত করেছিলেন কিম। ট্রাম্প ও কিমের মধ্যে ২০১৮ ও ২০১৯ সালে তিন দফা বৈঠক হলেও তার কোনোটাই ফলপ্রসু হয়নি।

যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে বুধবার ক্ষমতাগ্রহণ করবেন বাইডেন। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, পারমাণবিক অস্ত্র ও ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা আরও বিস্তৃত করা থেকে উত্তর কোরিয়াকে বিরত রাখাকেই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে পারেন বাইডেন।

উত্তর কোরিয়াকে পারমাণবিক অস্ত্রমুক্ত করতে অটল যুক্তরাষ্ট্র। তবে পিয়ংইয়ং কখনও জনসমক্ষে বলেনি, তারাও সেটা চায়। পারমাণবিক কর্মসূচির কারণে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞায় বিপর্যস্ত উত্তর কোরিয়ার অর্থনীতি। ফলে দেশটি সেই নিষেধাজ্ঞা থেকে বেরোতে চায়।

উল্লেখ্য, ২০১৮ ও ২০১৯ সালে তিন বার বৈঠকে বসেন ডোনাল্ড ট্রাম্প ও কিম জং-উন। পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণের বিনিময়ে উত্তর কোরিয়ার ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার প্রশ্নে সিঙ্গাপুর ও ভিয়েতনামে প্রথম দুই দফা বৈঠকে বসেন কিম-ট্রাম্প।

সবশেষ ২০১৯ সালের জুলাই মাসে তাদের বৈঠক হয় দুই কোরিয়ার সীমান্তে অবস্থিত পানমুনজমের একটি বেসামরিক এলাকায়। এর কোনোটিতেই আশানুরূপ ফল পাওয়া যায়নি।

সূত্র: আলজাজিরা

টিএম