অসংখ্য মানুষের হৃদয়জয়ী উপস্থাপক ল্যারি কিং আর নেই
প্রভাবশালী ও জনপ্রিয় রাজনৈতিক নেতা এবং তারকাদের সাক্ষাৎকার নিয়ে বিশ্বজুড়ে অসংখ্য মানুষের হৃদয়ে ঠাঁই পাওয়া যুক্তরাষ্ট্রের প্রখ্যাত টেলিভিশন উপস্থাপক ল্যারি কিংয়ের জীবন গাড়ি থমকে গেছে। প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ৮৭ বছর বয়সে থেমে গেছে এই টিভি ব্যক্তিত্বের গতি, শনিবার খবর দিয়েছে সিএনএন, বিবিসি।
ছয় দশকের টেলিভিশন ক্যারিয়ারে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ, সংস্থা ও গোষ্ঠীর প্রভাবশালী ৫০ হাজারের বেশি মানুষের সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন তিনি। মার্কিন জনপ্রিয় সংবাদমাধ্যম সিএনএনে গত ২৫ বছর ধরে ‘ল্যারি কিং লাইভ’ নামে সাক্ষাৎকারের এক অনুষ্ঠান করে আসছিলেন তিনি।
বিজ্ঞাপন
কিংয়ের প্রতিষ্ঠিত প্রোডাকশন কোম্পানি ওরা মিডিয়া বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলসের সিডার্স- সিনাই মেডিক্যাল সেন্টারে থেমে গেছে তার জীবন গাড়ি। চলতি মাসের শুরুর দিকে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন তিনি।
গত কয়েক বছরে হার্ট অ্যাটাকসহ আরও বেশ কিছু স্বাস্থ্য জটিলতায় ভুগছিলেন জনপ্রিয় এই টক শো উপস্থাপক। এক বিবৃতিতে ওরা মিডিয়া বলছে, ৬৩ বছর ধরে রেডিও, টেলিভিশন ও ডিজিটাল মিডিয়াসহ বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে হাজার হাজার সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ল্যারি। অসংখ্য পুরস্কারের পাশাপাশি সম্প্রচার মাধ্যমের অনন্য স্থায়ী প্রতিভার স্বাক্ষর রেখে গেছেন তিনি।
বিজ্ঞাপন
১৯৭০ এর দশকে বাণিজ্যিক রেডিও প্রোগ্রাম মিচুয়াল ব্রডকাস্টিং সিস্টেমে দ্য ল্যারি কিং শো’র মাধ্যমে খ্যাতির চূড়ায় পৌঁছান কিং। পরবর্তীতে ১৯৮৫ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত সিএনএনের ল্যারি কিং লাইভ অনুষ্ঠানের উপস্থাপনা করে হাজার হাজার সাক্ষাৎকার নেন তিনি।
মার্কিন প্রভাবশালী দৈনিক ইউএসএ ট্যুডেতে গত ২০ বছর ধরে কলামও লিখে আসছিলেন তিনি। সর্বশেষ তিনি রাশিয়ার সরকারি আন্তর্জাতিক সম্প্রচার মাধ্যম আরটি এবং হুলুতে ‘ল্যারি কিং নাউ’ নামের আরেকটি অনুষ্ঠানের উপস্থাপনা করতেন তিনি।
জেরাল্ড ফোর্ড থেকে বারাক ওবামা পর্যন্ত প্রায় প্রত্যেক মার্কিন প্রেসিডেন্টের সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন ল্যারি কিং। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের অহিংস নাগরিক অধিকার আন্দোলনের কিংবদন্তি মার্টিন লুথার কিং, তিব্বতের আধ্যাত্মিক নেতা দালাই লামা, দক্ষিণ আফ্রিকার নেলসন ম্যান্ডেলা এবং মার্কিন জনপ্রিয় সংগীত শিল্পী লেডি গাগার সাক্ষাৎকারও নিয়েছিলেন তিনি।
নিউইয়র্কের ব্রুকলিনে ১৯৩৩ সালে জন্মগ্রহণ করেন কিং। রাজনীতিক, ক্রীড়াবিদ, বিনোদন ব্যক্তিত্বসহ অসংখ্য অতিথির সাক্ষাৎকার নেয়া কিং নিজেই এক সময় তারকা বনে যান। বিশ্বজুড়েই ল্যারির সাক্ষাৎকারের দর্শক-শ্রোতা গড়ে ওঠে। তবে অতিথিদের খেলামেলা প্রশ্ন করে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলার জন্যও সমালোচিত হয়েছিলেন তিনি। দীর্ঘ কর্মজীবনে দু’টি পিবডি ও একটি অ্যামি পুরস্কার পেয়েছিলেন কিং।
২০১০ সালে তার জনপ্রিয়তায় ব্যাপক ভাটা পড়লে সমালোচকরা আক্রমণাত্মক সাক্ষাৎকারের যুগে ল্যারির পুরনো ধাঁচ আর চলে না বলে মন্তব্য করেন। পরে অবসরের ঘোষণা দিয়ে এই উপস্থাপক বলেন, আমার ক্যারিয়ারের অবসানের এটাই উপযুক্ত সময়।
কিং সিএনএনে তার সর্বশেষ প্রোগ্রামে দর্শকদের উদ্দেশে বলেছিলেন, আপনাদের বাদ দিয়ে কী বলতে হবে তা আমি জানি না। তবে আমার দর্শক শ্রোতাদের ধন্যবাদ।
এসএস