এশিয়ার প্রথম দেশ হিসেবে সিঙ্গাপুর যুক্তরাষ্ট্রের ফার্মাসিউটিক্যাল জায়ান্ট ফাইজার এবং জার্মান বায়োএনটেকের তৈরি করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিনের অনুমোদন দিয়েছে। চলতি মাসের শেষের দিকে ফাইজারের এই ভ্যাকসিনের প্রথম চালান সিঙ্গাপুরে পৌঁছাতে পারে বলে প্রত্যাশা করেছেন দেশচির প্রধানমন্ত্রী লি সিয়েন লুং।

আগামী বছরের শেষের দিকে এই নগর রাষ্ট্রের ৫৭ লাখ মানুষের প্রত্যেকেই করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন পাবেন বলে প্রত্যাশা করেছেন প্রধানমন্ত্রী লি

সোমবার ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম রয়টার্স এক প্রতিবেদনে সিঙ্গাপুরে ফাইজারের ভ্যাকসিনের অনুমোদনের খবর দিয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ফাইজার-বায়োএনটেকের নভেল করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিনের অনুমোদন দিয়েছে সিঙ্গাপুর।  

আগামী বছরের শেষের দিকে এই নগর রাষ্ট্রের ৫৭ লাখ মানুষের প্রত্যেকেই করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন পাবেন বলে প্রত্যাশা করেছেন প্রধানমন্ত্রী লি। একই সঙ্গে দেশটিতে দীর্ঘদিন ধরে বসবাসরত প্রবাসী এবং নাগরিকরা বিনামূল্যে এই ভ্যাকসিন পাবেন বলে জানিয়েছেন তিনি।

ফাইজারের এই ভ্যাকসিনগ্রহণ পুরোপুরি স্বেচ্ছায় হবে জানিয়ে লি বলেন, স্বাস্থ্যসেবা কর্মী, সম্মুখসারির কর্মকর্তা, বয়স্ক এবং ঝুঁকিপূর্ণ গোষ্ঠীর সদস্যরা করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পাবেন। তবে প্রথম দফায় সরকারের অন্যান্য কর্মকর্তাদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী লি-ও ভ্যাকসিন নেবেন বলে জানিয়েছেন।

ফাইজার ছাড়াও মার্কিন আরেক প্রতিষ্ঠান মডার্না এবং চীনের সিনোভ্যাকের সঙ্গে ভ্যাকসিন অগ্রাধিকারভিত্তিতে পাওয়ার জন্য চুক্তি করেছে সিঙ্গাপুর

রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারমাধ্যমে দেয়া এক বিবৃতিতে লি বলেন, আমি ও আমার সহকর্মীরা বয়স্কদের সঙ্গে প্রথমেই ভ্যাকসিন নেব। আমরা বিশ্বাস করি ভ্যাকসিন নিরাপদ; জ্যেষ্ঠদের এ বিষয়টি জানানোর জন্যই এটি করা হবে।

ফাইজার ছাড়াও মার্কিন আরেক প্রতিষ্ঠান মডার্না এবং চীনের সিনোভ্যাকের সঙ্গে ভ্যাকসিন অগ্রাধিকারভিত্তিতে পাওয়ার জন্য চুক্তি করেছে সিঙ্গাপুর। ভ্যাকসিনের জন্য ইতোমধ্যে এ দুই কোম্পানিকে এক বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি আগাম পরিশোধ করেছে।  

এর আগে, বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে ফাইজার-বায়োএনটেকের করোনা ভ্যাকসিন সর্বত্র প্রয়োগের অনুমোদন দেয় যুক্তরাজ্য। দেশটিতে ইতোমধ্যে এই ভ্যাকসিনের প্রয়োগ শুরু হয়েছে। ফাইজার এবং বায়োএনটেক বলছে, তাদের তৈরি করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিনটি তৃতীয় ধাপের পরীক্ষায় ৯৫ শতাংশ কার্যকর। 

যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, বাহরাইন এবং সৌদি আরবও ফাইজার-বায়োএনটেকের যৌথভাবে তৈরি ভ্যাকসিনের অনুমোদন দিয়েছে।

যুক্তরাজ্য ইতোমধ্যে এই ভ্যাকসিনের ৪ কোটি ডোজ কেনার জন্য ফাইজার এবং বায়োএনটেকের সঙ্গে চুক্তি সম্পন্ন করেছে। এর ফলে দেশটির ২ কোটি মানুষকে দু’টি করে ডোজ দেয়া যাবে। শিগগিরই দেশটিতে এই ভ্যাকসিনের এক কোটি ডোজ পৌঁছাবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে।
 
করোনাভাইরাস মহামারির লাগাম টানতে টিকাদানকে গুরুত্বপূর্ণ টার্নিং পয়েন্ট হিসেবে দেখা হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রে। শুক্রবার ভ্যাকসিনটির জরুরি ব্যবহারের অনুমোদন দেয় দেশটির খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন (এফডিএ)। ট্রাম্প প্রশাসনের তীব্র চাপের মুখে ভ্যাকসিনের এই অনুমোদনকে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে অভিহিত করেছে এফডিএ। 

কানাডা, বাহরাইন এবং সৌদি আরবও ফাইজার এবং বায়োএনটেকের তৈরি এই ভ্যাকসিনের অনুমোদন দিয়েছে। গত বছরের ডিসেম্বরে চীনের উহানে প্রাণঘাতী এই ভাইরাসের উৎপত্তি হওয়ার পর মহামারি আকারে বিশ্বের দুই শতাধিক দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে। বিশ্বজুড়ে নতুন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ৭ কোটি ২৬ লাখের বেশি মানুষ এবং মারা গছেন ১৬ লাখের বেশি।

সূত্র : এএফপি, রয়টার্স।

এসএস