রাশিয়ায় নাভালনি সমর্থকদের বিক্ষোভ ঠেকাতে কঠোর বিধিনিষেধ
প্রেসিডেন্ট পুতিনের সমালোচক ও বিরোধী নেতা অ্যালেক্সি নাভালনির মুক্তির দাবিতে সমর্থকরা বিক্ষোভের ডাক দেওয়ায় রাশিয়াজুড়ে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। রোববার (৩১ জানুয়ারি) এই বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, বিক্ষোভ ঠেকাতে পুতিন প্রশাসন রাজধানী মস্কোর সকল মেট্রো স্টেশন বন্ধ ও মানুষের চলাচল সীমিত করেছে। এছাড়া সিটি সেন্টারের বেশিরভাগ রেস্তোরাঁ ও দোকানপাট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে ভূগর্ভস্থ পরিবহন ব্যবস্থাও রাখা হবে বন্ধ।
বিজ্ঞাপন
এর আগে নাগালনির মুক্তির দাবিতে আয়োজিত বিক্ষোভ থেকে গত সপ্তাহে চার হাজারেরও বেশি মানুষকে আটক করা হয়। গত শনিবার নাভালনির মুক্তির দাবিতে কয়েক লাখ সমর্থক মস্কো ও সেন্ট পিটার্সবার্গে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ শুরু করলে তাদের ওপর চড়াও হয় রাশিয়ার পুলিশ। ব্যাপক লাঠিচার্জ করে বিক্ষোভ ছত্রভঙ্গ করে দেওয়ার সময় গ্রেফতার করা হয় অনেককে।
বিজ্ঞাপন
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের কড়া সমালোচক ৪৪ বছর বয়সী আইনজীবী ও বিরোধী নেতা নাভালনিকে গত বছর আগস্টে রাসায়নিক বিষ দিয়ে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছিল। বিষক্রিয়ায় গুরুতর অসুস্থ হয়ে কোমায় চলে গিয়েছিলেন তিনি। পরে জার্মানির একটি হাসপাতালে চিকিৎসা গ্রহণের পর তিনি সুস্থ হয়ে উঠেন এবং গত ১৭ জানুয়ারি দেশে ফেরেন। কিন্তু রাশিয়ায় ফেরার পর বিমানবন্দরেই গ্রেপ্তার হন নাভালনি।
অর্থ আত্মসাৎ মামলায় স্থগিত দণ্ডের প্যারোলের শর্ত লঙ্ঘনের অভিযোগে নাভালনিকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে জানায় রুশ কর্তৃপক্ষ। এমনকি মস্কোর একটি আদালত তার ৩০ দিনের রিমান্ডও মঞ্জুর করে। এরপরই সমর্থকদের রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করার আহ্বান জানান নাভালনি।
অবশ্য এই বিক্ষোভে অংশ নেওয়া থেকে দূরে থাকার ‘পরামর্শ দিয়ে’ মানুষকে সতর্ক করে পুতিন প্রশাসন। রাশিয়ান কর্তৃপক্ষের দাবি- বিক্ষোভে অংশ নিলে কোভিড-১৯ এ সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি থাকবে। পাশাপাশি অনুমোদনহীন এসব বিক্ষোভ-সমাবেশে উপস্থিত থাকলে মামলা ও কারাবাসেরও সম্ভাবনা আছে।
এদিকে নিজের কারাবাসের আদেশকে ‘চরমভাবে অবৈধ’ বলে আখ্যায়িত করেছেন বিরোধী নেতা অ্যালেক্সি নাভালনি। তিনি বলেন, রুশ সরকার জানে গত আগস্টে বিষ প্রয়োগে হত্যা চেষ্টার পর আমি জার্মানিতে চিকিৎসা নিতে গিয়েছিলাম। তারপরও আমাকে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
বিবিসি বলছে, বিক্ষোভে অংশ নেওয়ার বিরুদ্ধে পুলিশের স্পষ্ট হুমকি থাকলেও রোববার রাশিয়াজুড়ে লাখ লাখ মানুষ রাস্তায় নেমে আসতে পারেন। এমনকি এসময়ে তাপমাত্রা মাইনাস ৫২ (-৫২) ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে আসার পূর্বাভাস থাকলেও মানুষ বিক্ষোভে অংশ নেবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। এছাড়া বিক্ষোভ বানচাল করতে গত এক সপ্তাহে নাভালনির ঘনিষ্ঠ সহযোগীসহ অনেককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তার করা হয়েছে তার স্ত্রী ও ভাইকেও।
মানবাধিকার বিষয়ক একটি রুশ ওয়েবসাইটের প্রধান সম্পাদক সের্গেই স্মিরনভকে শনিবার তার বাড়ির সামনে থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত সপ্তাহের বিক্ষোভে অংশ নেওয়ার অভিযোগে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। অবশ্য স্মিরনকে গ্রেপ্তারের নিন্দা জানিয়েছেন অন্য সাংবাদিকরা।
বিবিসি বলছে, মস্কোর কারাগারে নাভালনির সমর্থকদের আটক রাখতে জায়গা সংকুলান করতে হিমশিম খাচ্ছে পুতিন প্রশাসন।
কে এই নাভালনি?
দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলনের কর্মী এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বিরোধী হিসেবে অত্যন্ত পরিচিত রাজনীতিক নাভালনি। ২০১৮ সালে দেশটির প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে লড়াইয়ের চেষ্টা করেছিলেন তিনি। কিন্তু অর্থ আত্মসাতের দায়ে দেশটির বিরোধী এই নেতাকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশ নেয়া থেকে বিরত রাখা হয়।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে রাশিয়ার বিরোধী এই নেতার লাখ লাখ অনুসারী রয়েছেন। চলতি বছর সাইবেরিয়ার স্থানীয় পরিষদ নির্বাচনে নাভালনির কয়েকজন সমর্থক নির্বাচিত হয়েছেন।
গত বছরের আগস্টে বিষাক্ত নার্ভ অ্যাজেন্ট হামলায় মৃত্যুর দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছিলেন নাভালানি। এই হামলার জন্য রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে দায়ী করেন তিনি; যদিও ক্রেমলিন এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
সূত্র: বিবিসি
টিএম