রাশিয়ার ভ্লাদিভস্তকে রোববার মাস্ক পরে বিক্ষোভে অংশ নিয়েছেন এক ব্যক্তি, মাস্কে লেখা- ‘পুতিনকে অবশ্যই বিদায় নিতে হবে’

পুলিশের স্পষ্ট হুমকি ও তীব্র শীত উপেক্ষা করে প্রেসিডেন্ট পুতিনের সমালোচক ও বিরোধী নেতা আলেক্সি নাভালনির মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করেছেন রাশিয়ার জনগণ। রোববার (৩১ জানুয়ারি) দেশটির পূর্বাঞ্চলীয় এলাকাগুলোতে পুলিশি বাধা উপেক্ষা করে বিক্ষোভে নামেন সাধারণ মানুষ। তবে রাজধানী মস্কোতে বিক্ষোভ আরও পরে শুরু হতে পারে।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি বলছে, আলেক্সি নাভালনির মুক্তির দাবিতে রাশিয়ার পূর্বাঞ্চলীয় এলাকাগুলোতে ইতোমধ্যেই বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। পুলিশি বাধা উপেক্ষা করেই বিক্ষোভে নেমেছেন তারা। এমনকি তাপমাত্রা মাইনাস ৫২ (-৫২) ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে আসার পূর্বাভাস থাকলেও তাতে মানুষ কর্ণপাত করছেন না।

বিক্ষোভরত মানুষের ওপর রাশিয়ার পুলিশের অ্যাকশন। গত সপ্তাহের ছবি

এদিকে একটি তদারকি সংস্থার বরাত দিয়ে বিবিসি জানিয়েছে, রোববার বিক্ষোভ শুরু হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত আড়াই’শো জনের বেশি মানুষকে আটক করেছে রাশিয়ার পুলিশ।

এর আগে বিরোধী নেতা অ্যালেক্সি নাভালনির মুক্তির দাবিতে সমর্থকরা বিক্ষোভের ডাক দেওয়ায় রাশিয়াজুড়ে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করে পুতিন প্রশাসন। বিক্ষোভ ঠেকাতে রাজধানী মস্কোর সকল মেট্রো স্টেশন বন্ধ ও মানুষের চলাচল সীমিত করেছে দেশটি। এছাড়া সিটি সেন্টারের বেশিরভাগ রেস্তোরাঁ ও দোকানপাট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে ভূগর্ভস্থ পরিবহন ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে বন্ধ।

বিক্ষোভ ঠেকাতে রাজধানী মস্কোয় পুলিশের সতর্ক অবস্থান

এর আগে নাগালনির মুক্তির দাবিতে আয়োজিত বিক্ষোভ থেকে গত সপ্তাহে চার হাজারেরও বেশি মানুষকে আটক করা হয়। গত শনিবার নাভালনির মুক্তির দাবিতে কয়েক লাখ সমর্থক মস্কো ও সেন্ট পিটার্সবার্গে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ শুরু করলে তাদের ওপর চড়াও হয় রাশিয়ার পুলিশ। ব্যাপক লাঠিচার্জ করে বিক্ষোভ ছত্রভঙ্গ করে দেওয়ার সময় গ্রেফতার করা হয় অনেককে।

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের কড়া সমালোচক ৪৪ বছর বয়সী আইনজীবী ও বিরোধী নেতা নাভালনিকে গত বছর আগস্টে রাসায়নিক বিষ দিয়ে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছিল। বিষক্রিয়ায় গুরুতর অসুস্থ হয়ে কোমায় চলে গিয়েছিলেন তিনি। পরে জার্মানির একটি হাসপাতালে চিকিৎসা গ্রহণের পর তিনি সুস্থ হয়ে উঠেন এবং গত ১৭ জানুয়ারি দেশে ফেরেন। কিন্তু রাশিয়ায় ফেরার পর বিমানবন্দরেই গ্রেপ্তার হন নাভালনি।

অর্থ আত্মসাৎ মামলায় স্থগিত দণ্ডের প্যারোলের শর্ত লঙ্ঘনের অভিযোগে নাভালনিকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে জানায় রুশ কর্তৃপক্ষ। এমনকি মস্কোর একটি আদালত তার ৩০ দিনের রিমান্ডও মঞ্জুর করে। এরপরই সমর্থকদের রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করার আহ্বান জানান নাভালনি।

অবশ্য পূর্বঘোষিত রোববারের এই বিক্ষোভে অংশ নেওয়া থেকে দূরে থাকার ‘পরামর্শ দিয়ে’ মানুষকে আগেই সতর্ক করেছে পুতিন প্রশাসন। রাশিয়ান কর্তৃপক্ষের দাবি- বিক্ষোভে অংশ নিলে কোভিড-১৯ এ সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি থাকবে। পাশাপাশি অনুমোদনহীন এসব বিক্ষোভ-সমাবেশে উপস্থিত থাকলে মামলা ও কারাবাসেরও সম্ভাবনা আছে। এছাড়া বিক্ষোভ বানচাল করতে গত এক সপ্তাহে নাভালনির ঘনিষ্ঠ সহযোগীসহ অনেককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তার করা হয়েছে তার স্ত্রী ও ভাইকেও।

মানবাধিকার বিষয়ক একটি রুশ ওয়েবসাইটের প্রধান সম্পাদক সের্গেই স্মিরনভকে শনিবার তার বাড়ির সামনে থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত সপ্তাহের বিক্ষোভে অংশ নেওয়ার অভিযোগে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। অবশ্য স্মিরনকে গ্রেপ্তারের নিন্দা জানিয়েছেন অন্য সাংবাদিকরা।

বিবিসি বলছে, মস্কোর কারাগারে নাভালনির সমর্থকদের আটক রাখতে জায়গা সংকুলান করতে হিমশিম খাচ্ছে পুতিন প্রশাসন।

সূত্র: বিবিসি

টিএম