হংকংয়ের বাসিন্দাদের ব্রিটিশ নাগরিকত্বের সুযোগ, দিচ্ছে বিশেষ ভিসা
চীনের সাম্প্রতিক আগ্রাসন থেকে বাঁচতে হংকংয়ের যেসব বাসিন্দা ব্রিটেনে এসে আশ্রয় নিয়েছেন, তাদের যুক্তরাজ্যের নাগরিকত্বের জন্য আবেদনের সুযোগ রেখে নতুন ভিসা নীতি প্রণয়ন করতে যাচ্ছে ব্রিটেন সরকার।
রোববার থেকে কার্যকর হতে যাওয়া নতুন এই ভিসানীতি অনুযায়ী, ব্রিটেনে হংকং থেকে আসা লোকজনকে যে ভিসা দেওয়া হবে, তার আওতায় তারা ৫ বছর দেশটিতে থাকার এবং কাজ করার অনুমতি পাবেন, এরপর নাগারিকত্বের জন্য আবেদন করতে পারবেন।
বিজ্ঞাপন
গতবছর জুলাইয়ে চীনের পার্লামেন্টে ‘জাতীয় নিরাপত্তা আইন’ পাস হয়। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোতে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, বিতর্কিত এই আইনের আওতায় চীনের ক্ষমতাসীন সরকার এক বছরের বেশি সময় যাবৎ হংকংয়ের গণতন্ত্রপন্থী নেতাকর্মীদের গ্রেফতার ও দমনপীড়ন করছে।
যুক্তরাজ্য নীতিগতভাবে যাবতীয় অগণতান্ত্রিক আচরণ ও দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে উল্লেখ করে দেশটির প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন নতুন এই ভিসানীতির প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘হংকংয়ের সঙ্গে ব্রিটেনের যে ঐতিহাসিক বন্ধন এবং মৈত্রী, তার প্রতি আমাদের গভীর শ্রদ্ধা রয়েছে এবং এখন সময় এসেছে স্বাধীনতা ও স্বায়ত্বশাসনের পক্ষে আমাদের অবস্থান স্পষ্ট করার।’
বিজ্ঞাপন
এদিকে যুক্তরাজ্যের নতুন এই ভিসানীতিতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে চীন। দেশটির সরকারের তরফ থেকে বলা হয়েছে, হংকং থেকে কেউ যেন আর ব্রিটেনে ‘পালাতে’ না পারে- সেজন্য এবার থেকে নজরদারি বাড়িয়ে দেওয়া হবে।
১৮২১ সাল থেকে ১৯৯৬ পর্যন্ত প্রায় ১৭৫ বছর যুক্তরাজ্যের একটি নিয়ন্ত্রিত এলাকা হিসেবে শাসিত হংকংকে ১৯৯৭ সালে চীন সরকারের কাছে হস্তান্তর করে তৎকালীন ব্রিটেন সরকার। ১৯৮৪ সালে এ বিষয়ক একটি চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছিল যুক্তরাজ্য এবং চীন সরকারের মধ্যে, সেই চুক্তি অনুযায়ী সম্পন্ন হয় এই হস্তান্তর প্রক্রিয়া।
চুক্তিতে হংকংয়ের স্বায়ত্বশাসন এবং স্বাধিকারের বিষয়ে সম্মতি ছিল চীনের। এরপর থেকে এতদিন পর্যন্ত চীনের একটি বিশেষ প্রশাসনিক অঞ্চল হিসেবে শাসিত হয়ে আসছিল বর্তমান বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই আর্থ-বাণিজ্যিক কেন্দ্র ও সমুদ্রবন্দর।
তবে সম্প্রতি বিরোধ তৈরি হয় চীন এবং হংকংয়ের মধ্যে। চীন ধারাবাহিকভাবে ১৯৮৪ সালের চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করছে বলে অভিযোগ তোলেন হংকংয়ের গণতন্ত্রপন্থী নেতাকর্মীরা এবং ২০১৯ সাল থেকে চীনের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করেন তারা। এর প্রেক্ষিতে ওই বছর জুলাই মাসে জাতীয় নিরাপত্তা আইন পাস করে চীন পার্লামেন্ট।
এরপর এই আইনের অধীনে হংকংয়ে অভিযান শুরু করে চীনের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। হংকংয়ের স্বায়ত্বশাসন ও স্বাধিকারের পক্ষে অবস্থান নেওয়ায় ইতোমধ্যে ওই অঞ্চলের ডেমোক্রেটিক ও সিভিক পার্টির বেশ কয়েকজন নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের কারাবন্দি করেছে চীন সরকার।
হংকংয়ের গণতন্ত্রপন্থীদের বিরুদ্ধে চীন সরকার দিন দিন তার নীতি কঠোর করতে থাকায় গতবছর থেকেই আশ্রয়ের জন্য যুক্তরাজ্যে আসতে থাকেন হংকংয়ের স্বাধিকারপন্থি লোকজন। বর্তমানে যুক্তরাজ্যে রয়েছেন সাত হাজারেরও বেশি হংকংয়ের নাগরিক।
সূত্র: আলজাজিরা
এসএমডব্লিউ