বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড নিয়ে দেশে-বিদেশে প্রায়ই সমালোচনার মুখে পড়তে হয় দেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে। সে ধরনেরই এক প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ উল্টো প্রশ্ন করেছেন, বন্দুকযুদ্ধ হলে কি আমাদের লোকজন বন্দুক ফেলে পালিয়ে চলে আসবে?

বেনজীর আরও বলেন, সন্ত্রাসীরা গুলি করলে সেটা প্রতিহত করতেই সরকার পুলিশকে অস্ত্র দিয়েছে। প্রয়োজনের নিরিখে জীবন রক্ষার জন্য সরকারি অস্ত্র ব্যবহার করা হয়। আজ (বুধবার) দুপুরে রাজধানীর রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালের (সিপিএইচ) নবনির্মিত ভবনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।

মঙ্গলবার কক্সবাজারে ঘটে যাওয়া বন্দুকযুদ্ধ নিয়ে করা এক প্রশ্নের জবাবে আইজিপি বলেন, বন্দুকযুদ্ধ হলে কি আমাদের লোকজন বন্দুক ফেলে পালিয়ে চলে আসবে? জকির ডাকাত, ভয়াবহ ডাকাত। যান, কক্সবাজারে গিয়ে খবর নেন। গত তিন বছরে তার কাছ থেকে কমপক্ষে দেড়শ অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল যখন গোলাগুলিতে সে মারা গেছে তখনও তার কাছ থেকে নয়টা অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। যখন এ ধরনের কোনো বিপজ্জনক আর্ম গ্যাং গুলি করবে, তখন কি আমরা শহীদ হয়ে চলে আসবো?

বেনজীর আরও বলেন, সরকার অস্ত্র দিয়েছে লাঠি হিসেবে ব্যবহারের জন্য না। লাঠি একরকম আর লিথেল উইপন আরেকরকম। সরকার যদি শুধু লাঠি দেয়, আমরা লাঠিই ব্যবহার করবো।

মঙ্গলবার বিকেলে টেকনাফের ২৬ নম্বর রোহিঙ্গা শিবিরের শালবন পাহাড়ে র‌্যাবের সঙ্গে গোলাগুলিতে তিনজন নিহত হন। এ তিনজনের একজন ছিলেন শীর্ষ রোহিঙ্গা ডাকাত জকির বাহিনীর প্রধান জকি। এই জকির প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে বেনজীর বলেন, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার এলাকার মানুষ জানে, জকির ডাকাত কী জিনিস, তার হাতে কতো লোক অপহৃত হয়েছেন আর কতোজন মারা গেছেন। তাই যেটা হয়েছে, সেটা আমি মনে করি প্রয়োজন হলে হবে, না হলে হবে না। এখানে ঘোষণা দিয়ে চালু করা বা বন্ধ করার কোনো বিষয় নেই।

এ সময় সিপিএইচের নবনির্মিত ভবন প্রসঙ্গে আইজিপি বলেন, গত বছরে মার্চে অতিমারি করোনার আবির্ভাব ঘটে, আর এতে সবচেয়ে বড় ক্যাজুয়ালিটি হয়েছে বাংলাদেশ পুলিশের। করোনায় প্রায় ৮৩ জন সদস্য শাহাদাত বরণ করছেন, সম্মুখযোদ্ধা হিসেবে ২১ হাজার সদস্য আক্রান্ত হয়েছেন। কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতাল একটি জেনারেল হাসপাতাল ছিল, কিন্তু করোনা পরিস্থিতিতে আমরা এটিকে দ্রুত কোভিড হাসপাতাল হিসেবে রূপান্তর করি। ২৫০০ থেকে সাড়ে ১১০০ বেডে রূপান্তর করি। এখানে পুলিশ সদস্যদের চিকিৎসা ছাড়াও প্রায় ১৫০০ করোনা আক্রান্ত সাধারণ নাগরিককে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। ভ্যাক্সিনেশনের শুরু থেকে পুলিশ সদস্য ও সাধারণ মানুষ মিলে প্রায় ২৮ হাজার মানুষকে ভ্যাক্সিনেশন করা হয়েছে, যা প্রতিদিনই দিয়ে যাচ্ছি।

নতুন ভবনের ফলে এ হাসপাতালের আইসিইউ, সিসিইউ, এইচডিইউ ক্যাপাসিটি বৃদ্ধি পাবে জানিয়ে তিনি বলেন, পুলিশ সদস্যরা খুব চ্যালেঞ্জিং পরিবেশে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। নানা কারণে পুলিশে হার্টের রোগী, ফুসফুস, কিডনি ও ক্যান্সারের রোগী প্রচুর। প্রতিবছর কোটি কোটি টাকা খরচ করি তাদের বাইরে চিকিৎসা করানোর জন্য। এ হাসপাতালকে একটা পূর্ণাঙ্গ হাসপাতাল তৈরির চেষ্টা করছি, যাতে সব ধরনের চিকিৎসা নিশ্চিত করা যায়। আজকে যে ক্যাপাসিটি বৃদ্ধি পেয়েছে এরপর বাকি থাকবে ক্যান্সার ইউনিট। আশা করছি আগামী বছর এটি চালু করা সম্ভব হবে। আজকের পর এখানকার চিকিৎসা সুবিধা অনেক বেশি সম্প্রসারিত হবে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশক্রমে বিভাগীয়-জেলা পুলিশ হাসপাতালগুলোকে উন্নত করার চেষ্টা করছি, যা পর্যায়ক্রমে করা হবে। পুলিশ মেডিকেল সার্ভিসেরও চেষ্টা চলছে।

অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পুলিশের মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বিষয়ে একাধিকবার সরকারের সঙ্গে কথা হয়েছে। এ পর্যায়ে বিষয়টি বিবেচনাধীন রয়েছে। সরকার অনুমোদন দিলে আমরা মেডিকেল কলেজ বানাবো।

এমএসি/এনএফ