আয়শা খানমের মৃত্যুতে মহিলা পরিষদের সাতদিনের শোক
আয়শা খানম
বিশিষ্ট নারীনেত্রী, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি আয়শা খানমের মৃত্যুতে সাতদিনের শোক ঘোষণা করেছে সংগঠনটি।
তার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে মহিলা পরিষদের কেন্দ্র ও সব জেলা শাখা কার্যালয়ে ৩ থেকে ৯ জানুয়ারি পর্যন্ত শোক পালিত হবে বলে জানিয়েছেন মহিলা পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু।
বিজ্ঞাপন
শনিবার (২ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় এক বিজ্ঞপ্তিতে তিনি জানান, এই সাতদিন সংগঠনের পতাকা অর্ধনমিত থাকবে ও কালো পতাকা উত্তোলন করা হবে। আগামী ৩ হতে ৫ জানুয়ারি পর্যন্ত তিনদিন কেন্দ্রীয় ও জেলা শাখা কার্যালয়গুলো বন্ধ থাকবে।
উল্লেখ্য, শনিবার ভোরে আয়শা খানম অসুস্থ হয়ে পড়লে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে দায়িত্বরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
বিজ্ঞাপন
প্রয়াত নারীনেত্রী আয়শা খানম বাষট্টির ছাত্র আন্দোলন, উনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান, মহান মুক্তিযুদ্ধসহ গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক, মানবাধিকার ও প্রগতিশীল আন্দোলনের অন্যতম সক্রিয় সংগঠক।
আয়শা খানমের মৃত্যুতে গভীর শোক ও শ্রদ্ধা জানিয়েছে বিভিন্ন সংগঠন ও বিশিষ্ট নেতারা। তার মরদেহ শনিবার সকাল ৯টায় মহিলা পরিষদের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে নেওয়া হয়। সেখানে সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটি, ঢাকা মহানগর কমিটি, সংগঠনের নারায়ণগঞ্জ ও বেলাবো শাখা শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। পাশাপাশি সংগঠনের কর্মকর্তারা শ্রদ্ধা জানান।
আয়শা খানম ১৯৪৭ সালের ১৮ অক্টোবর নেত্রকোনার গাবড়াগাতি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৬৯-৭০ সেশনে সমাজবিজ্ঞানে মাস্টার্স শেষ করেন। ১৯৭১ সালে তিনি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৭২ সালে মহিলা পরিষদের সঙ্গে যুক্ত হন এবংপরে সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
এরপর ২০০৮ সাল থেকে তিনি সংগঠনটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। নারীদের রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন, নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধ, আইন সংস্কার আন্দোলন, সিডও বাস্তবায়নসহ নারী মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। একজন দক্ষ, সংগঠক ও সুবক্তা ছিলেন আয়শা খানম। দাবি আদায়ের লক্ষ্যে তার কণ্ঠ ছিল সোচ্চার। নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে অ্যাডভোকেসি ও লবির ক্ষেত্রেও তিনি পারদর্শিতার স্বাক্ষর রেখেছেন। ঐক্যবদ্ধ ও শক্তিশালী নারী আন্দোলন গড়ে তুলতে নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়েছেন।
২০০২ সাল থেকে ৬৮টি সংগঠনের প্লাটফর্ম সামাজিক প্রতিরোধ কমিটির সেক্রেটারিয়েটের নেতৃত্ব দিয়ে আসছিলেন। বৈশ্বিক নারী আন্দোলনেও তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন।
এ নারী নেত্রী ১৯৯২ সালে ভিয়েনাতে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় মানবাধিকার সম্মেলন এবং ১৯৯৫ সালে বেইজিং এ অনুষ্ঠিত ৪র্থ বিশ্ব নারী সম্মেলন, ২০১১ সালে জেনেভায় অনুষ্ঠিত সিডও কমিটির এবং কমিশন অন দ্য স্ট্যাটাস অফ উইমেনের (সিএসডব্লিউ) বিভিন্ন অধিবেশনে অংশগ্রহণ করেন। এছাড়াও ইউএনএসসিএপ, আইডব্লিউআরএডব্লিউ, ইউএনআইএফইএম আয়োজিত বিভিন্ন আঞ্চলিক কর্মসূচিতে তিনি অংশগ্রহণ করেন। এছাড়াও নারী ইস্যুতে তিনি পত্র-পত্রিকায় লেখালেখি করতেন।
জেইউ/ওএফ