তেজগাঁও সাতরাস্তা থেকে উত্তরা হাউজ বিল্ডিং পর্যন্ত ১০টি ইউটার্ন নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি)। নির্মাণ কাজ শেষে ইতোমধ্যে ছয়টি ইউটার্ন খুলে দেওয়া হয়েছে। যানজট নিরসনে এসব ইউটার্ন নির্মাণ করা হলেও বিপরীত চিত্র দেখা গেছে বনানী চেয়ারম্যান বাড়ির ইউটার্নে। সুফল মিলছে না এই ইউটার্নে। উল্টো বেশি যানজট সৃষ্টি হচ্ছে বলে অভিযোগ অনেকের।

সর্বশেষ খুলে দেওয়া ইউটার্নগুলোর মধ্যে রয়েছে- তেজগাঁও বিজি প্রেসের সামনে, নাবিস্কো-কোহিনুর কেমিক্যাল মোড় ও বনানী চেয়ারম্যান বাড়ি। এ নিয়ে মোট ছয়টি ইউটার্ন চালু করা হয়েছে। খুলে দেওয়া অন্য তিনটি ইউটার্ন হচ্ছে- কাওলা ফ্লাইং একাডেমি, উত্তরা র‍্যাব-১ কার্যালয়ের সামনে ও উত্তরা জসিম উদ্দিন মোড়ে। 

চারটি ইউটার্ন নির্মাণের কাজ এখনও চলমান। ইউটার্ন চারটি হচ্ছে- মহাখালী আন্তঃজেলা বাস টার্মিনালের সামনে, মহাখালী ফ্লাইওভারের নিচে, বনানী-কাকলী রেলস্টেশন ও বনানী ফ্লাইওভারের নিচের ইউটার্ন।

প্রকল্পের শুরুতে মোট ১১টি ইউটার্ন নির্মাণ করার পরিকল্পনা থাকলেও আর্মি গলফ ক্লাব সংলগ্ন স্থানের ইউটার্নটি প্রথম সংশোধনী প্রকল্পে বাতিল করা হয়। প্রকল্পটির মূল অনুমোদিত ব্যয় ২৪ কোটি ৮৩ লাখ টাকা ছিল। তবে প্রথম সংশোধিত প্রাক্কলিত ব্যয় ৩১ কোটি ৮০ লাখ ৯৭ হাজার টাকা।

মহাখালী থেকে বনানী, উত্তরা থেকে বনানী-কাকলী রুপে আগে থেকেই যানজট হয়। ইউটার্ন নির্মাণের পর মঙ্গলবার বনানী চেয়ারম্যান বাড়ির ইউটার্ন প্রকল্প সরেজমিন পরিদর্শন করে দেখা যায়, আগের মতই যানজট আছে এই এলাকায়। ইউটার্ন নির্মাণের পরও যানজট কমেনি এখানে। মহাখালী থেকে বনানী রুট ও বনানীর দিক থেকে মহাখালী রুটে দেখা গেল আগের মতই তীব্র যানজট।

এখনও আগের মতই যানজট কেন? এমন প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে কথা হয় ঢাকা মেট্রোর নিবন্ধিত প্রাইভেট কার চালক সাইদুল হকের সঙ্গে। তিনি বলেন, এই সড়কে আগে থেকেই তীব্র যানজট হয়। ইউটার্ন নির্মাণ দেখে আশা করেছিলাম যানজট কমবে, কিন্তু ঘটেছে উল্টো ঘটনা। গুলশান-বনানীর দিক থেকে আসা প্রাইভেট কারসহ অন্যান্য যানবাহন এখন সরাসরি এই ইউটার্ন ব্যবহার করছে। এছাড়া এমইএস-এর দিক থেকে আসাও গাড়িগুলো ঢুকে যাচ্ছে এই ইউটার্নে। ফলে মহাখালীর দিক থেকে আসা অতিরিক্ত চাপের যানবাহনের সঙ্গে এগুলোও মিশে যাচ্ছে। যে কারণে আগের চেয়ে বেশি যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। 

তিনি আরও বলেন, অন্যদিকে মহাখালী ফ্লাইওভারের দিকে যাওয়ার গাড়ির কারণে এমনিতেই মহাখালী ওভারব্রীজের নিচের সিগন্যাল পর্যন্ত যানজট থাকছেই। যেটা আগেও ছিল। এই যানজট সেতু ভবন পেরেয়ে বিআরটি ভবন পর্যন্ত চলে আসছে। সব মিলিয়ে যানজট আগের চেয়ে কমেনি এখানে।

বনানী সিগন্যালে দায়িত্বপালন করা এক ট্রাফিক পুলিশ সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, জায়গা কম থাকায় এই ইউটার্ন ছোট আকারে নির্মাণ করা হয়েছে। আগে গুলশান-বনানীর দিক থেকে বের হওয়া গাড়িগুলো উত্তরার দিকে যাওয়ার জন্যে মহাখালী ফ্লাইওভারের নিচ দিয়ে ঘুরে আসতে হত, এখন বিপুল সংখ্যক গাড়ি এই ইউটার্ন ব্যবহার করছে। ফলে কাকলী-বনানী সিগন্যাল পর্যন্ত অতিরিক্ত গাড়ির চাপ থাকায় যানজট দীর্ঘ হচ্ছে। এছাড়া ইউটার্ন দিয়ে প্রাইভেট কার ছাড়া বড় কোন গাড়ি ঢুকলে গতি কমানোর কারণে পিছনে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে।

ইউটার্ন নির্মাণের পরও যানজট নিরসনে সুফল মিলছে না কেন? এ বিষয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেছেন, ইউটার্নগুলো চালু হলে এই সড়কে যানজট কমবে, যাতায়াতের সময়ও বাঁচবে। মোট ১০টি ইউটার্ন নির্মাণ করব। ইতোপূর্বে তিনটি ইউটার্ন নির্মাণ করা হয়েছে, সম্প্রতি আরও তিনটি ইউটার্ন খুলে দেওয়া হয়েছে। আরও চারটি নির্মাণাধীন। সবগুলো ইউটার্ন চালু হলে এর সুফল পাওয়া যাবে। আমাদের সব ইউটার্ণ একসাথে চালু হেল নগরবাসী এর সুফল পাবেন। কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত এর পুরোপুরি সফলতার বিষয়ে বোঝা যাবে না। নির্মাণকাজ শেষে সবগুলো একসাথে চালু হলে অবশ্যই যানজট কমে আসবে।

এএসএস/ওএফ