মা-মেয়ে নিখোঁজ, দোটানায় পুলিশ
সংগৃহীত ছবি
রাজধানীর খিলক্ষেতে মা মেয়ে নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় ‘দোটানায় পুলিশ’। পুলিশ বলছে, তারা নিখোঁজ হয়েছে, না-কি মা স্বেচ্ছায় মেয়েকে নিয়ে পালিয়েছেন তা নিয়ে রহস্য দেখা দিয়েছে।
নিখোঁজরা হলেন ফাতেমা আক্তার আঁখি (২২) ও ৬ বছরের মেয়ে আতিফা রহমান আয়াত।
বিজ্ঞাপন
গত সোমবার (১৮ জানুয়ারি) বিকেলে সাড়ে ৫টার দিকে উত্তরখানের নামাপাড়া এলাকা থেকে তারা নিখোঁজ হোন। এ ঘটনায় শনিবার আঁখির মামা আবদুল কাইয়ুম ও দেবর মতিউর রহমান খিলক্ষেত থানায় একটি নিখোঁজের সাধারণ ডায়রি (জিডি) করেন।
স্বামী জিল্লুর রহমান (৩৩) সৌদি প্রবাসী হওয়ায় আঁখি তার শ্বশুর বাড়ির লোকজনের সঙ্গে উত্তরখানে নামাপাড়া এলাকায় থাকত।
বিজ্ঞাপন
আঁখি ও তার মেয়ে আয়াতের নিখোঁজের বিষয়ে আঁখির মামা আবদুল কাইয়ুম ঢাকা পোস্টকে বলেন, গত ৬ মাস আগে ওমর ফারুক নামে এক যুবক আঁখির ফেসবুক আইডি হ্যাক করে। সে আঁখির আইডি থেকে তার স্বামীর কাছে পাঠানো অনেক স্পর্শকাতর ছবি নিয়ে নেয়। পরে সে এসব ছবি দেখিয়ে আঁখিকে বিভিন্নভাবে ব্ল্যাকমেইল করতে থাকে। ওমর ফারুক কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার উজিরপুর ইউনিয়নের কৈইয়া গ্রামের বাসিন্দা।
তিনি আরও বলেন, আঁখি এসব বিষয়ে আমাকে জানালে আমরা আইডি হ্যাকের বিষয়ে গত ছয় মাস আগে খিলক্ষেত থানায় একটি জিডি করি। এরপর আঁখিকে ওমর ফারুক আর ব্ল্যাকমেইল করত না বলে সে আমাকে জানায়। কিন্তু জিডির মাস-খানেক পর আবারও ব্ল্যাকমেইল করতে শুরু করে। তার কাছে নানা অঙ্কের টাকা চায়। না দিলে এসব ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেয়।
পরে আঁখি ভয় পেয়ে ওমর ফারুকের বিভিন্ন আবদার মেটাতে থাকে। যেহেতু আঁখির স্বামী তার নামে করা একাউন্টে টাকা পাঠাতো, তাই সে সহজেই সবাইকে না জানিয়ে বাধ্য হয়ে তাকে বিকাশে টাকা দিত। আঁখি নিখোঁজ হওয়ার পর তার এক ভাগিনার মাধ্যমে আমি জানতে পরেছি। আঁখি প্রতিমাসে ওমর ফারুককে টাকা পাঠাতো, সর্বশেষ সে তাকে ২০ হাজার টাকা বিকাশে পাঠিয়েছে।
ঘটনার দিনের বর্ণনা দিয়ে আঁখির মামা বলেন, ঘটনার দিন বিকেলে সাড় ৪টায় আঁখি তার মেয়েকে টিউশন টিচারের কাছে নিয়ে যাচ্ছে বলে বের হয়। এ সময় আয়াতের একটি স্কুল ব্যাগ ছিল এবং আঁখির ভ্যানেটি ব্যাগ ছিল তার সঙ্গে। তারা বের হওয়ার ৬ ঘণ্টা পরে আঁখির শ্বশুর বাড়ির লোকজন আমাদের ফোন দিয়ে রাত ১০টায় জানায় আঁখি ও আয়াতকে তারা খুঁজে পাচ্ছে না। পরে আঁখি ফোন নাম্বারে বার বার কল দিয়ে বন্ধ পাওয়া যাচ্ছিল।
নিখোঁজের বিষয়ে আঁখির পরিবার কি সন্দেহ করছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের সন্দেহ ওমর ফারুক আঁখিকে সকল স্পর্শকাতর ছবি দিয়ে দিবে বলে ডেকে নিয়েছে। পরে তাদের একা পেয়ে সে আটকে রেখেছে। তবে ঠিক কি কারণে সে এসব করছে তা আমরা বলতে পারব না।
পুলিশ বলছে, আঁখির ফোন ট্রেস করে ঘটনার দিন তার শেষ লোকেশন পাওয়া গেছে দক্ষিণখানে। এরপর তার আর কোনো লোকেশন পাওয়া যায়নি। তবে আঁখি স্বেচ্ছায়, না-কি কোনো অপরাধের শিকার হয়ে নিখোঁজ রয়েছেন তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
এ বিষয়ে খিলক্ষেত থানার উপ-পরিদর্শক মিজানুর ঢাকা পোস্টকে বলেন, নিখোঁজের বিষয়টি রহস্যজনক। সে ঘটনার দিন বাসা থেকে বলে বের হয়েছে। তার মানে সে কারো সঙ্গে কথা বলে ঘর থেকে বের হয়েছে। কিন্তু ওমর ফারুক নামে একটি ছেলের কথা তার পরিবার বলছে এবং তাকে আঁখি প্রতিমাসে টাকা দিত সেটাও পরিবার বলছে। এছাড়া আঁখি যে বিকাশ নম্বরে টাকা পাঠাতো পরিবারের কাছ থেকে আমরা সে নম্বরটি নিয়েছি।
তিনি বলেন, আমরা এখন তদন্ত করে দেখছি ওমর ফারুকের ব্ল্যাকমেইলিংয়ের কারণে কোনো বিপদের শিকার হয়েছে, নাকি পূর্ব কোনো সম্পর্কের জের ধরে স্বেচ্ছায় পালিয়ে গেছে। তদন্ত শেষ বিস্তারিত বলা যাবে।
এমএসি/এমএইচএস