মালয়েশিয়ায় ভারতীয়সহ দুই দালাল গ্রেপ্তার
গ্রেপ্তারদের গাড়িটি তল্লাশি করে কিছু মালয়েশিয়ান রিঙ্গিতও উদ্ধার করা হয়/ ছবি: সংগৃহীত
মালয়েশিয়ায় দালাল সিন্ডিকেটের দুই সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে ইমিগ্রেশন পুলিশ। রোববার (৭ ফেব্রুয়ারি) দেশটির পেনাংয়ে এক বিশেষ অভিযানে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত একমাস ধরে দালাল সিন্ডিকেটের সদস্যদের ধরতে গোয়েন্দা সংস্থা অভিযান চালিয়ে আসছিল। গোয়েন্দা অভিযানে ৩১ বছর বয়সী মালয়েশিয়ান নাগরিক ও ৩৫ বছর বয়সী ভারতীয় নাগরিককে আটক করা হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
দেশটির অবৈধ অভিবাসীদের বৈধতার আওতায় আনতে রিক্যালিব্রেশন নামে একটি প্রোগ্রাম হাতে নেয়। এই রিক্যালিব্রেশন প্রোগ্রামের বিপরীতে কাজ করছিল সিন্ডিকেটের সদস্যরা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অভিযানের উদ্দেশ্য হলো অসহায় প্রবাসীদের নিয়ে যেন সিন্ডিকেট অবৈধ ব্যবসা করতে না পারে। দালাল ও সিন্ডিকেটদের কারণে বিদেশি নাগরিকদের জন্য সরকারের দেওয়া বিভিন্ন সময় প্রোগ্রামগুলো সফল হয়নি।
বিজ্ঞাপন
এই সিন্ডিকেটের কাজ হলো ইমিগ্রেশন অফিসের সঙ্গে সমন্বয় করে বিদেশি নাগরিকদের অনলাইন অ্যাপয়েন্টমেন্ট পাইয়ে দেওয়া। ইমিগ্রেশনের পক্ষ থেকে অ্যাপয়েন্টমেন্ট না করে অবৈধ উপায়ে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে জনপ্রতি এক হাজার থেকে শুরু করে ১৫০০ রিঙ্গিতের বিনিময়ে কাজ করে দেন তারা। এই সিন্ডিকেটটি পেরলিস, কেদাহ, পেনাং, পেরাক, তেরেংগানু, কুয়ালালামপুর, জহুর বারু রাজ্যে সক্রিয়ভাবে কাজ করে আসছিল। অভিযানের সময় একটি হোন্ডা সিটি গাড়ি তল্লাসি করে নগদ চার হাজার রিঙ্গিতসহ তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
মাস্টারমাইন্ড সিন্ডিকেট সদস্যদের পাসপোর্ট আইন ১৯৯৬ ধারার (এফ) সেকশন ১২(১)এর অধীনে অপরাধে গ্রেপ্তার করা হয় তাদের। দোষী সাব্যস্ত হলে সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের কারাদণ্ড বা জরিমানা বা উভয়দণ্ডে দণ্ডিত হতে পারেন তারা। তাদেরকে সাত দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। ভারতীয় নাগরিকের বিরুদ্ধে আরও তদন্ত চলছে।
এদিকে, অবৈধদের বৈধতা দিতে রিক্যালিব্রেশন প্রোগ্রাম বাস্তবায়নের জন্য সরকার কোনো মধ্যস্থতাকারী দালাল/এজেন্ট/এজেন্সি নিয়োগ দেয়নি। সরকারের পরামর্শ হলো কোনো এজেন্ট/দালাল/এজেন্সির দ্বারস্থ না হতে। দালালের সঙ্গে অর্থিক লেনদেন না করতে আবারও সতর্ক করে দিয়েছেন দেশটির ইমিগ্রেশন বিভাগের সংশ্লিষ্টরা।
একাধিক সূত্রে জানা গেছে, করোনা মহামারির কারণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে চলাচলের বা প্রবেশের বিধিনিষেধের ফলে নতুন করে নিয়োগ থমকে গেছে। সরকারগুলো নাগরিকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় বেশি মনোযোগ দিয়েছে ফলে নিজ দেশে থাকা বিদেশিদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার আওতায় আনার কৌশল নিয়েছে। তদ্রূপ মালয়েশিয়ায় অবস্থান করা বিদেশি অবৈধ কর্মীদের বৈধ করতে রিক্যালিব্রেশন কর্মসূচি চালু করেছে যা ১ জানুয়ারি থেকে বাস্তবায়ন শুরু করেছে সরকার, চলবে ৩০ জুন পর্যন্ত। এ সুযোগ নিয়ে বৈধভাবে অবস্থান করার জন্য ১৫টি দেশের নাগরিকদের অনুরোধ করেছে সংশ্লিষ্ট দূতাবাস। এটি মালয়েশিয়ায় বিদেশি কর্মীদের এবং নিয়োগকর্তাদের শৃঙ্খলায় আনার প্রচেষ্টা সরকারের।
বৈধকরণ কর্মসূচির আওতায় বৈধ হওয়ার জন্য নির্দিষ্ট শর্ত ও যোগ্যতা আরোপ করা হয়েছে। যেমন- বৈধভাবে মালয়েশিয়ায় এসে ভিসায় উল্লেখিত নিয়োগকর্তার অধীনে কাজ করছে কিন্তু ভিসা রিনিউ করেনি বা মেয়াদোত্তীর্ণ হয়েছে, নিজ নিজ কোম্পানিতে কাজ করেনি এবং কোম্পানি থেকে পালিয়ে গেছে। এ ধরনের অপরাধ সংঘটিত হতে হবে গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর এর মধ্যে। এরপর হলে হবে না।
এর আগে ২০১৬ সালে রিহায়ারিং নামে বৈধকরণ কর্মসূচি দিয়েছিল মালয়েশিয়া সরকার। এর সঙ্গে রিক্যালিব্রেশনের কিছুটা পার্থক্য রয়েছে যা না বুঝলে প্রতারিত হতে হবে। যেমন রিহায়ারিং এ নৌ, সাগর বা স্থল পথে অবৈধভাবে অনুপ্রবেশ করেছিল তাদেরকেও বৈধতা দিয়েছিল। এবার সে সুযোগ নেই। সেবার বিভিন্ন ভিসাধারীদেরও সুযোগ দিয়েছিল, এবার সুনির্দিষ্ট উল্লেখ করা হয়েছে এবং অবশ্যই বৈধভাবে মালয়েশিয়ায় প্রবেশ করার প্রমাণ থাকতে হবে। রিহায়ারিংয়ের জন্য ভেন্ডর বা এজেন্ট ছিল এবার কোনো ভেন্ডর বা এজেন্ট নিয়োগ করেনি সরকার। গত রিহায়ারিংয়ে বৈধ হওয়ার জন্য আবেদন করে প্রতারিত হওয়ার মূল কারণ ছিল সেসব এজেন্ট। রিহায়ারিং কর্মসূচি শেষে হাজার হাজার কর্মীর প্রতারিত ও নিঃস্ব হয়েছিল বলে অভিযোগ ছিল। অনেক প্রতারক হাজার হাজার কর্মীর কাছ থেকে অর্থ নিয়ে রাতারাতি কৌশলে বাংলাদেশে পালিয়ে গিয়ে অবস্থান করে। ফলে তাদের মালয়েশিয়া পুলিশ আর খুঁজে পায়নি।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ প্রেসক্লাব অব মালয়েশিয়ার সভাপতি মনির বিন আমজাদ বলেন, মালয়েশিয়ায় কর্মী অবৈধ হয় প্রতারণার মাধ্যমে যেমন, বেশি বেতনের লোভ দেখিয়ে কর্মী ভাগিয়ে আনা, পরিচিত জনের কাছে শুনে বেশি আয়ের লোভে সেখানে চলে যাওয়া, কাজ পছন্দ না হওয়ায় পালিয়ে যাওয়া। তাই দেশ ছাড়ার আগেই কর্মীদের এসব বিষয়ে কঠোর প্রশিক্ষণ দিতে হবে অন্তত ভালোটা যাতে বুঝতে পারে।
আহমাদুল কবির/এফআর